চন্দ্রকান্ত। নাঃ! এ আগাগোড়া কেবল ছেলেমানুষি করা হয়েছে। আমার এমন অনুতাপ হচ্ছে! মনে হচ্ছে, যেন আমিই এ-সমস্ত কাণ্ডটি ঘটিয়েছি। ইদিকে এত কল্পনা, এত কবিত্ব, এত মাতামাতি, আর বিয়ের দুদিন না যেতে যেতেই কিছু আর মনে ধরছে না। ওঁদের জন্য একটি আলাদা জগৎ ফরমাশ দিতে হবে। একটি শান্তিপুরে ফিনফিনে জগৎ—কেবল চাঁদের আলো, ঘুমের ঘোর আর পাগলের পাগলামি দিয়ে তৈরি!
নিমাই। কী হচ্ছে চন্দরদা।
চন্দ্রকান্ত। না, নিমাই, তোরা আর বিয়ে-থাওয়া করিস নে।
নিমাই। কেন বলো দেখি—তোমার ঘাড়ে ম্যাল্থসের ভূত চাপল নাকি।
চন্দ্রকান্ত। এখনকার ছেলেরা তোরা মেয়েমানুষকে বিয়ে করবার যোগ্য ন’স। তোরা কেবল লম্বাচওড়া কথা ক’বি আর কবিতা লিখবি, তাতে যে পৃথিবীর কী উপকার হবে ভগবান জানেন।
নিমাই। কবিতা লিখে পৃথিবীর কী উপকার হয় বলা শক্ত, কিন্তু এক-এক সময়ে নিজের কাজে লেগে যায় সন্দেহ নেই। যা হোক এত রাগ কেন?
চন্দ্রকান্ত। শুনেছ তো সমস্তই। আমাদের বিনুর তাঁর স্ত্রীকে পছন্দ হচ্ছে না।
নিমাই। বাস্তবিক, এরকম গুরুতর ব্যাপার নিয়ে খেলা করাটা ভালো হয় নি।
চন্দ্রকান্ত। বিনুটা যে এত অপদার্থ তা কি জানতুম। একটা স্ত্রীলোককে ভালোবাসবার ক্ষমতাটুকুও নেই? একবার ভেবে দেখ্ দেখি ভাই—একটি বালিকা হঠাৎ একদিন রাত্রে তার আশৈশব আত্মীয়স্বজনের বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে সমস্ত ইহকাল পরকাল তোমার বাম হস্তে তুলে দিলে আর তার পরদিন সক্কালবেলা উঠে কিনা তাকে তোমার পছন্দ হল না! এ কি পছন্দর কথা!
নিমাই। সেইজন্য তো ভাই, গোড়ায় একবার দেখে শুনে নেওয়া উচিত ছিল। তা এখন কী করবে বলো দেখি।
চন্দ্রকান্ত। আমি তো আর তার মুখদর্শন করছি নে। এই নিয়ে তার সঙ্গে আমার ভারি ঝগড়া হয়ে গেছে।
নিমাই। তুমি তাকে ছাড়লে সে যে নেহাত অধঃপাতে যাবে।
চন্দ্রকান্ত। না, তার সঙ্গে আমি কিছুতেই মিশছি নে, সে যদি আমার পায়ে ধরে এসে পড়ে তবু না! তুমি ঠিক বলেছিলে নিমাই, আজকাল সবাই যাকে ভালোবাসা বলে সেটা একটা স্নায়ুর ব্যামো—হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে ধরে, আবার হঠাৎ ঘাম দিয়ে ছেড়ে যায়।
নিমাই। সে-সব বিজ্ঞানশাস্ত্রের কথা পরে হবে, আপাতত আমার একটা কাজ করে দিতে হচ্ছে।
চন্দ্রকান্ত। যে কাজ বল তাতেই রাজি আছি কিন্তু ঘটকালি আর করছি নে।
নিমাই। ঐ ঘটকালিই করতে হবে।
চন্দ্রকান্ত। (ব্যগ্রভাবে) কী রকম শুনি।