ইন্দু। অর্থাৎ, এ তো শুধু কাব্যরস নয়, এ যে রসতত্ত্ব। দিদি, তোমার এ কবিটি যে-সে কবি নয় — কাব্যকুঞ্জবনে এই মানুষটি নারিকেলজাতীয়। তোমার ভাগ্যে শাঁসও জুটবে, রসও জুটবে!
কমল। আর তোর ভাগ্যে ইন্দু?
ইন্দু। শুধু ছোবড়া।
বিনোদ। ছি ছি ভাই, আমার মধ্যে এমন রসের সংকীর্ণতা দেখলে কোথায়?
ইন্দু। কবিবর, সংকীর্ণতার দর বেশি, ঔদার্যেই সস্তা করে। হীরের টুকরো সংকীর্ণ, পাথরের চাঁই মস্ত। আমরা চাই, তুমি একলা আমার দিদির কণ্ঠহারে একটিমাত্র মধ্যমণি হয়ে থাকো — সরকারি হোটেলের রান্নাঘরে মস্ত শিলনোড়ার কাজে বিশ্বজনীন হয়ে না ওঠো।
বিনোদ। তাই সই, কিন্তু ঐ যে গানটা তৈরি করলেম ওটাকে সুরের হারে গেঁথে একলা তোমার কণ্ঠে কি স্থান দেবে না?
ইন্দু। আচ্ছা, আজ তোমার গুড কন্ডাক্টের প্রাইজ স্বরূপে এই অনুগ্রহ করতে রাজি আছি।কোন্ সুর তোমার পছন্দ বলো।
বিনোদ। তোমার পছন্দেই আমার পছন্দ।
ইন্দু। আচ্ছা, সখা, তবে শ্রবণ করো।
গান
লুকালে বলেই খুঁজে বাহির-করা।
পাওয়া ধন আনমনে
হারাই যে অযতনে,
হারাধন পেলে সে যে হৃদয়-ভরা।
আপনি যে কাছে এল দূরে সে আছে,
কাছে যে টানিয়া আনে সে আসে কাছে।
দূরে বারি যায় চ'লে,
লুকায় মেঘের কোলে,
তাই সে ধরায় ফেরে পিপাসাহরা।
কমল। ঐ ক্ষান্তদিদি আসছেন। ( বিনোদের প্রতি) তোমার সাক্ষাতে উনি বেরোবেন না।
[ বিনোদের প্রস্থান
ক্ষান্তমণির প্রবেশ
ক্ষান্তমণি। তা বেশ হয়েছে ভাই, বেশ হয়েছে। এই বুঝি তোর নতুন বাড়ি। এ যে রাজার ঐশ্বর্য! তা বেশ হয়েছে। এখন তোর স্বামী ধরা দিলেই আর কোনো খেদ থাকে না।
ইন্দু। সে বুঝি আর বাকি আছে? স্বামী রত্নটিকে আগে-ভাগে ভাঁড়ারে পুরেছেন।
ক্ষান্তমণি। আহা, তা বেশ হয়েছে, বেশ হয়েছে। কমলের মতো এমন লক্ষ্মী মেয়ে কি কখনো অসুখী হতে পারে?