পঞ্চক। ওঁ তট তট তোতয় তোতয় —আচ্ছা দাদা।
মহাপঞ্চক। আবার দাদা। মন্ত্রটা শেষ করো বলছি।
পঞ্চক। একটা কথা জিজ্ঞাসা করি —এ মন্ত্রটার ফল কী?
মহাপঞ্চক। এ মন্ত্র প্রত্যহ সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে উনসত্তর বার করে জপ করলে নব্বই বৎসর পরমায়ু হয়।
পঞ্চক। রক্ষা করো দাদা। এটা জপ করতে গিয়ে আমার এক বেলাকেই নব্বই বছর মনে হয়—দ্বিতীয় বেলায় মনে হয় মরেই গেছি।
মহাপঞ্চক। আমার ভাই হয়েও তোমার এই দশা! তোমার জন্যে আমাদের এই অচলায়তনের সকলের কাছে কি আমার কম লজ্জা!
পঞ্চক। লজ্জার তো কোনো কারণ নেই দাদা।
মহাপঞ্চক। কারণ নেই?
পঞ্চক। না। তোমার পাণ্ডিত্যে সকলে আশ্চর্য হয়ে যায়। কিন্তু তার চেয়ে ঢের বেশি আশ্চর্য হয় তুমি আমারই দাদা বলে।
মহাপঞ্চক। এই বানরটার উপর রাগ করাও শক্ত। দেখো পঞ্চক, তুমি তো আর বালক নও—তোমার এখন বিচার করে দেখবার বয়স হয়েছে।
পঞ্চক। তাই তো বিপদে পড়েছি। আমি যা বিচার করি তোমাদের বিচার একেবারে তার উলটো দিকে চলে, অথচ তার জন্যে যা দণ্ড সে আমাকে একলাই ভোগ করতে হয়।
মহাপঞ্চক। পিতার মৃত্যুর পর কী দরিদ্র হয়ে, সকলের কী অবজ্ঞা নিয়েই এই আয়তনে আমরা প্রবেশ করেছিলুম, আর আজ কেবল নিজের শক্তিতে সেই অবজ্ঞা কাটিয়ে কত উপরে উঠেছি—আমার এই দৃষ্টান্তও কি তোমাকে একটু সচেষ্ট করে না?
পঞ্চক। সচেষ্ট করবার তো কথা নয়। তুমি যে নিজগুণেই দৃষ্টান্ত হয়ে বসে আছ, ওর মধ্যে আমার চেষ্টার তো কিছুমাত্র দরকার হয় না। তাই নিশ্চিন্ত আছি।
মহাপঞ্চক। ঐ শঙ্খ বাজল। এখন আমার সপ্তকুমারিকাগাথা পাঠের সময়। কিন্তু বলে যাচ্ছি, সময় নষ্ট কোরো না।
পঞ্চক। বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর,
কেঁপে ওঠে বন্ধ এ ঘর,
বাহির হতে দুয়ারে কর
কেউ তো হানে না।
আকাশে কার ব্যাকুলতা,
বাতাস বহে কার বারতা,
এ পথে সেই গোপন কথা
কেউ তো আনে না।
তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে
কেউ তা জানে না॥