ইন্দু। ক্ষান্তদিদি, তুমি যে ভর-সন্ধের সময় ঘরকন্না ফেলে এখানে ছুটে এসেছ?
ক্ষান্তমণি। আর ভাই, ঘরকন্না! আমি দুদিন বাপের বাড়ি গিয়েছিলুম, এই ওঁর আর সহ্য হল না। রাগ ক'রে ঘর ছেড়ে, শুনলুম, তোদের এই বাড়িতে এসে রয়েছেন। তা, ভাই, বিয়ে করেছি বলেই কি বাপ মা একেবারে পর হয়ে গেছে? দুদিন সেখানে থাকতে পাব না? যা হোক, খবরটা পেয়ে চলে আসতে হল।
ইন্দু। আবার তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বুঝি?
ক্ষান্তমণি। তা, ভাই, একলা তো আর ঘরকন্না হয় না। ওদের যে চাই, ওদের যে নইলে নয়। নইলে আমার কি সাধ ওদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখি?
ইন্দু। ঐ যে ওঁরা আসছেন। এসো এই পাশের ঘরে।
[ প্রস্থান
শিবচরণ গদাই নিবারণ ও চন্দ্রকান্তের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত। সমস্ত ঠিক হয়ে গেছে।
শিবচরণ। কী হলো বলো দেখি।
চন্দ্রকান্ত। ললিতের সঙ্গে কাদম্বিনীর বিবাহ স্থির হয়ে গেল।
শিবচরণ। সে কী! সে যে বিবাহ করবে না শুনলুম?
চন্দ্রকান্ত। সহধর্মিণীকে না। বিয়ে করছে টাকা-কল্পলতিকাকে ; সে ওকে সাতপাকে ঘিরে বিলেত যাবার পাথেয়-পুষ্পবৃষ্টি করবে। যা হোক, এখন আর-একবার আমাদের গদাইবাবুর মত নেওয়া উচিত — ইতিমধ্যে যদি আবার বদল হয়ে থাকে।
শিবচরণ। ( ব্যস্তভাবে) না না, আর মত বদলাতে সময় দেওয়া হবে না। তার পূর্বেই আমরা পাঁচজনে প'ড়ে চেপেচুপে ধ'রে কোনো গতিকে ওর বিয়েটা দিয়ে দিতে হচ্ছে। চলো গদাই, অনেক আয়োজন করবার আছে।
(নিবারণের প্রতি) তবে চললেম ভাই!
নিবারণ। এসো। —
[ গদাই ও শিবচরণের প্রস্থান
চন্দ্রবাবু, আপনার তো খাওয়া হল না, কেবল ঘুরে ঘুরেই অস্থির হলেন — একটু বসুন, আপনার জন্যে জলখাবারের আয়োজন করে আসি গে।
[ প্রস্থান
ক্ষান্তমণির প্রবেশ
ক্ষান্তমণি। এখন বাড়ি যেতে হবে না কী?
চন্দ্রকান্ত। ( দেয়ালের দিকে মুখ করিয়া) নাঃ, আমি এখানে বেশ আছি।
ক্ষান্তমণি। তা তো দেখতে পাচ্ছি। তা চিরকাল এইখানেই কাটাবে নাকি?
চন্দ্রকান্ত। বিনুর সঙ্গে আমার তো সেইরকমই কথা হয়েছে।
ক্ষান্তমণি। বিনু তোমার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কিনা! বিনুর সঙ্গে কথা হয়েছে! এখন ঢের হয়েছে, চলো।
চন্দ্রকান্ত। ( জিব কাটিয়া, মাথা নাড়িয়া) সে কি হয়। বন্ধুমানুষকে কথা দিয়েছি, এখন কি সে ভাঙতে পারি।
ক্ষান্তমণি। আমার ঘাট হয়েছে, আমাকে মাপ করো তুমি। আমি আর কখনো বাপের বাড়ি গিয়ে থাকব না। তা তোমার