সন্দীপ বললেন, পঞ্চাশ হাজার চাই। আমার মাতাল মন বলে উঠল, পঞ্চাশ হাজার কিছুই নয়, এনে দেব! কোথায় পাব, কী করে পাব, সেও কি একটা কথা! এই তো আমি নিজে এক মুহূর্তে কিছু-না থেকে একেবারে সব-কিছুকে যেন ছাড়িয়ে উঠেছি! এমনি করেই এক ইশারায় সব ঘটনা ঘটবে। পারব পারব পারব! একটুও সন্দেহ নেই।
চলে তো এলুম। তার পর চার দিকে চেয়ে দেখি, টাকা কই? কল্পতরু কোথায়? বাহিরটা মনকে এমন করে লজ্জা দেয় কেন? কিন্তু তবু টাকা এনে দেবই। যেমন করেই হোক, তাতে গ্লানি নেই। যেখানে দীনতা সেখানেই অপরাধ, শক্তিকে কোনো অপরাধ স্পর্শই করে না। চোরই চুরি করে, বিজয়ী রাজা লুঠ করে নেয়। কোথায় মালখানা, সেখানে কার হাতে টাকা জমা হয়, পাহারা দেয় কারা, এই-সব সন্ধান করছি! অর্ধেক রাত্রে বাহির-বাড়িতে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দফতরখানার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে কাটিয়েছি। ঐ লোহার গরাদের মুঠো থেকে পঞ্চাশ হাজার ছিনিয়ে নেব কী করে? মনে দয়া ছিল না। যারা পাহারা দিচ্ছে তারা যদি মন্ত্রে ঐখানে মরে পড়ে তা হলে এখনই আমি উন্মত্ত হয়ে ঐ ঘরের মধ্যে ছুটে যেতে পারি। এই বাড়ির রানীর মধ্যে ডাকাতের দল খাঁড়া হাতে নৃত্য করতে করতে দেবীর কাছে বর মাগতে লাগল— কিন্তু বাইরের আকাশ নিঃশব্দ হয়ে রইল, প্রহরে প্রহরে পাহারা বদল হতে লাগল, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজল, বৃহৎ রাজবাড়ি নির্ভয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে রইল।
শেষকালে একদিন অমূল্যকে ডাকলুম। বললুম, দেশের জন্যে টাকার দরকার, খাজাঞ্চির কাছ থেকে এ টাকা বের করে আনতে পারবে না?
সে বুক ফুলিয়ে বললে, কেন পারব না?
হায় রে, আমিও সন্দীপের কাছে এমনি করে বলেছিলুম ‘কেন পারব না’। অমূল্যর বুক-ফোলানো দেখে একটুও আশ্বাস পেলুম না।
জিজ্ঞাসা করলুম, কী করবে বলো দেখি।
অমূল্য এমনি-সব আজগুবি প্ল্যান বলতে লাগল যে, সে মাসিক কাগজের ছোটো গল্পে ছাড়া আর কোথাও প্রকাশ করবারই যোগ্য নয়।
আমি বললুম, না অমূল্য, ও-সব ছেলেমানুষি রাখো।
সে বললে, আচ্ছা, টাকা দিয়ে ঐ পাহারার লোকদের বশ করব।
টাকা পাবে কোথায়?
সে অম্লান মুখে বললে, বাজার লুঠ ক’রে।
আমি বললুম, ও-সব দরকার নেই, আমার গয়না আছে তাই দিয়ে হবে।
অমূল্য বললে, কিন্তু খাজাঞ্চির উপর ঘুষ চলবে না। খুব একটা সহজ ফিকির আছে।
কিরকম?
সে আপনার শুনে কাজ নেই। সে খুব সহজ।
তবু শুনি।