ভিক্ষুণী। তবে আদেশ করো আমি যাই।
লোকেশ্বরী। একটু থামো। তোমার সঙ্গে তার দেখা হয়?
ভিক্ষুণী। হয়।
লোকেশ্বরী। আচ্ছা, একবার না হয় তাকে— যদি সে—না, থাক্।
ভিক্ষুণী। আমি তাঁকে বলব। হয়তো তাঁর সঙ্গে তোমার দেখা হবে।
[ প্রস্থান
লোকেশ্বরী। হয়তো, হয়তো, হয়তো! নাড়ীর রক্ত দিয়ে তাকে তো পালন করেছিলাম, তার মধ্যে ‘হয়তো’ ছিল না। এতদিনের সেই মাতৃঋণের দাবি আজ এই একটুখানি হয়তো-য় এসে ঠেকল। একেই বলে ধর্ম! মল্লিকা।
মল্লিকার প্রবেশ
মল্লিকা। দেবী।
লোকেশ্বরী। কুমার অজাতশত্রুর সংবাদ পেলে?
মল্লিকা। পেয়েছি। দেবদত্তকে আনতে গেছেন। এ-রাজ্যে ত্রিরত্ন-পূজার কিছুই বাকি থাকবে না।
লোকেশ্বরী। ভীরু! রাজার সাহস নেই রাজত্ব করতে। বুদ্ধ-ধর্মের কত যে শক্তি তার প্রমাণ তো আমার উপর দিয়ে হয়ে গেছে। তবু ওই অপদার্থ দেবদত্তের আড়ালে না দাঁড়িয়ে এই মিথ্যাকে উপেক্ষা করতে ভরসা হল না।
মল্লিকা। মহারানী, যাদের অনেক আছে তাদেরই অনেক আশঙ্কা। উনি রাজ্যেশ্বর, তাই ভয়ে ভয়ে সকল শক্তির সঙ্গেই সন্ধির চেষ্টা। বুদ্ধশিষ্যের সমাদর যখন বেশি হয়ে যায় অমনি উনি দেবদত্ত-শিষ্যদের ডেকে এনে তাদের আরও বেশি সমাদর করেন। ভাগ্যকে দুই দিক থেকেই নিরাপদ করতে চান।
লোকেশ্বরী। আমার ভাগ্য একেবারে নিরাপদ। আমার কিছুই নেই, তাই মিথ্যাকে সহায় করবার দুর্বলবুদ্ধি ঘুচে গেছে।
মল্লিকা। দেবী, ভিক্ষুণী উৎপলপর্ণার মতোই তোমার এ কথা। তিনি বলেন, লোকেশ্বরী মহারানীর ভাগ্য ভালো, মিথ্যা যে-সব খোঁটায় মানুষকে বাঁধে, ভগবান মহাবোধির কৃপায় সেই-সব খোঁটাই তাঁর ভেঙে গেছে।
লোকেশ্বরী। দেখো ওই সব বানানো কথা শুনলে আমার রাগ ধরে। তোমাদের অতিনির্মল ফাঁকা সত্য নিয়ে তোমরা থাকো, আমার ওই মাটিতে-মাখা খুঁটি ক’টা আমাকে ফিরিয়ে দাও। তাহলে আবার না হয় অশোকচৈত্যে দীপ জ্বালব, একশো শ্রমণকে অন্ন দেব, ওদের যত মন্ত্র আছে সব একধার থেকে আবৃত্তি করিয়ে যাব। আর তা যদি না হয় তো আসুন দেবদত্ত, তা তিনি সাঁচ্চাই হোন আর ঝুঁটোই হোন। যাই, একবার প্রাসাদ শিখরে গিয়ে দেখিগে এঁরা কতদূরে।
[ উভয়ের প্রস্থান