সঞ্জীব। কিন্তু এখন করা যায় কী?
জয়োত্তম। আমাদের আচার্যদেবকে এখনই ফিরিয়ে আনি গে। তিনি থাকলে এ বিপত্তি ঘটতেই পারত না। হাজার হোক লোকটা পাকা।
সঞ্জীব। কিন্তু দেখো মহাপঞ্চক, আমাদের আয়তনের যদি কোনো বিপত্তি ঘটে তা হলে তোমাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলব।
উপাধ্যায়। সে পরিশ্রমটা তোমাদের করতে হবে না, উপযুক্ত লোক আসছে।
মহাপঞ্চক। তোমরা মিথ্যা বিচলিত হচ্ছ। বাইরের প্রাচীর ভাঙতে পারে, কিন্তু ভিতরের লোহার দরজা বন্ধ আছে। সে যখন ভাঙবে তখন চন্দ্রসূর্য নিবে যাবে। আমি অভয় দিচ্ছি তোমরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে অচলায়তনের রক্ষক-দেবতার আশ্চর্য শক্তি দেখে নাও।
উপাধ্যায়। তার চেয়ে দেখি কোন্ দিক দিয়ে বেরোবার রাস্তা।
বিশ্বম্ভর। আমাদেরও তো সেই ইচ্ছা। কিন্তু এখান থেকে বেরোবার পথ যে জানিই নে। কোনোদিন বেরোতে হবে বলে স্বপ্নেও মনে করি নি।
সঞ্জীব। শুনছ —ওই শুনছ, ভেঙে পড়ল সব।
ছাত্রগণ। কী হবে আমাদের। নিশ্চয় দরজা ভেঙেছে। এই যে একেবারে নীল আকাশ।
উপাধ্যায়। কী রে তোরা সব নৃত্য করছিস কেন?
প্রথম বালক। আজ এ কী মজা হল।
উপাধ্যায়। মজাটা কী রকম শুনি?
দ্বিতীয় বালক। আজ চার দিক থেকেই আলো আসছে –সব যেন ফাঁক হয়ে গেছে।
তৃতীয় বালক। এত আলো তো আমরা কোনোদিন দেখি নি।
প্রথম বালক। কোথাকার পাখির ডাক এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে।
দ্বিতীয় বালক। এ-সব পাখির ডাক আমরা তো কোনোদিন শুনি নি। এ তো আমাদের খাঁচার ময়নার মতো একেবারেই নয়।
প্রথম বালক। আজ আমাদের খুব ছুটতে ইচ্ছে করছে। তাতে কি দোষ হবে মহাপঞ্চকদাদা?
মহাপঞ্চক। আজকের কথা ঠিক বলতে পারছি নে। আজ কোনো নিয়ম রক্ষা করা চলবে বলে বোধ হচ্ছে না।
প্রথম বালক। আজ তা হলে আমাদের ষড়াসন বন্ধ?
মহাপঞ্চক। হাঁ, বন্ধ।
সকলে। ওরে কী মজা রে কী মজা।
দ্বিতীয় বালক। আজ পঙ্ক্তিধৌতির দরকার নেই?
মহাপঞ্চক। না।
সকলে। ওরে কী মজা! আঃ আজ চারদিকে কী আলো।
জয়োত্তম। আমারও মনটা নেচে উঠেছে বিশ্বম্ভর! এ কি ভয়, না আনন্দ, কিছুই বুঝতে পারছি নে।