আমি বললুম, একবার দেখে আসি গে, হয়তো কোনো জরুরি কাজ আছে।
মেজোরানী বললেন, না, সে হবে না। ছোটোরানী কাল বিস্তর পিঠে তৈরি করেছে, দারোগাকে সেই পিঠে খেতে পাঠিয়ে তার মেজাজ ঠাণ্ডা করে রাখছি।
বলে তিনি আমাকে হাতে ধরে টেনে স্নানের ঘরের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
আমি ভিতর থেকে বললুম, আমার সাফ কাপড় যে এখনো—
তিনি বললেন, সে আমি ঠিক করে রাখব, ততক্ষণ তুমি স্নান করে নাও।
এই উৎপাতের শাসনকে অমান্য করি এমন সাধ্য আমার নেই ; সংসারে এ যে বড়ো দুর্লভ। থাক্ গে, দারোগাবাবু বসে বসে পিঠে খাক গে। নাহয় হল আমার কাজের অবহেলা।
ইতিমধ্যে সেই ডাকাতি নিয়ে দারোগা দু-পাঁচ জনকে ধরা-পাকড়া করছেই। রোজই একটা-না-একটা নিরীহ লোককে ধরে বেঁধে এনে আসর গরম করে রেখেছে। আজও বোধ হয় তেমনি কোন্-এক অভাগাকে পাকড়া করে এনেছে। কিন্তু পিঠে কি একলা দারোগাই খাবে? সে তো ঠিক নয়। দরজায় দমাদম ঘা লাগালুম।
মেজোরানী বাইরে থেকে বললেন, জল ঢালো, জল ঢালো, মাথা গরম হয়ে উঠেছে বুঝি?
আমি বললুম, পিঠে দুজনের মতো সাজিয়ে পাঠিয়ো ; দারোগা যাকে চোর বলে ধরেছে পিঠে তারই প্রাপ্য, বেহারাকে বলে দিয়ো তার ভাগে যেন বেশি পড়ে।
যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি স্নান সেরেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলুম। দেখি দরজার বাইরে মাটির উপরে বিমল বসে! এ কি আমার সেই বিমল, সেই তেজে অভিমানে ভরা গরবিনী! কোন্ ভিক্ষা মনের মধ্যে নিয়ে এ আমার দরজাতেও বসে থাকে! আমি একটু থমকে দাঁড়াতেই সে উঠে মুখ একটু নিচু করে আমাকে বললে, তোমার সঙ্গে আমার একটু কথা আছে।
আমি বললুম, তা হলে এসো আমাদের ঘরে।
কোনো বিশেষ কাজে কি তুমি বাইরে যাচ্ছ?
হাঁ, কিন্তু থাক্ সে কাজ, আগে তোমার সঙ্গে—
না, তুমি কাজ সেরে এসো, তার পরে তোমার খাওয়া হলে কথা হবে।
বাইরে গিয়ে দেখি দারোগার পাত্র শূন্য। সে যাকে ধরে এনেছে সে তখনো বসে বসে পিঠে খাচ্ছে।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললুম, এ কী, অমূল্য যে!
সে এক-মুখ পিঠে নিয়ে বললে, আজ্ঞে হাঁ। পেট ভরে খেয়ে নিয়েছি, এখন কিছু যদি না মনে করেন তা হলে যে ক’টা বাকি আছে রুমালে বেঁধে নিই।
বলে পিঠেগুলো সব রুমালে বেঁধে নিলে।
আমি দারোগার দিকে চেয়ে বললুম, ব্যাপারখানা কী?
দারোগা হেসে বললে, মহারাজ, চোরের হেঁয়ালি তো হেঁয়ালিই রয়ে গেছে, তার উপরে চোরাই মালের হেঁয়ালি নিয়ে মাথা ঘোরাচ্ছি।