শ্রীমতী। (লতাবিতানতলে আসন বিছাইয়া, দূরে চাহিয়া) সময় হল, এস তোমরা।
নিশীথে কী কয়ে গেল মনে,
কী জানি কী জানি।
সে কি ঘুমে সে কি জাগরণে,
কী জানি কী জানি।
মালতী। তুমি শ্রীমতী?
শ্রীমতী। হাঁ গো, কেন বলো তো।
মালতী। প্রতিহারী পাঠিয়ে দিলে তোমার কাছে গান শিখতে।
শ্রীমতী। প্রাসাদে তোমাকে তো পূর্বে কখনো দেখিনি।
মালতী। নতুন এসেছি গ্রাম থেকে, আমার নাম মালতী।
শ্রীমতী। কেন এলে বাছা? সেখানে কি দিন কাটছিল না? ছিলে পূজার ফুল, দেবতা ছিলেন খুশি; হবে ভোগের মালা, উপদেবতা হাসবে। ব্যর্থ হবে তোমার বসন্ত। গান শিখতে এসেছ? এইটুকু তোমার আশা?
মালতী। সত্যি বলব? তার চেয়ে অনেক বড়ো আশা। বলতে সংকোচ হয়।
শ্রীমতী। ও, বুঝেছি। রাজরানী হবার দুরাশা। পূর্বজন্মে যদি অনেক দুস্কৃতি করে থাক তো হতেও পার। বনের পাখি সোনার খাঁচা দেখে লোভ করে, যখন তার ডানায় চাপে দুষ্টবুদ্ধি। যাও, যাও, ফিরে যাও, এখনো সময় আছে।
মালতী। কী তুমি বলছ, দিদি, ভালো বুঝতে পারছিনে।
শ্রীমতী। আমি বলছি—
গান
বাঁধন কেন ভূষণবেশে তোরে ভোলায়,
হায় অভাগী!
মরণ কেন মোহন হেসে তোরে দোলায়,
হায় অভাগী!
মালতী। তুমি আমাকে কিছুই বোঝনি। তবে স্পষ্ট করে বলি। শুনেছি একদিন ভগবান বুদ্ধ বসেছিলেন এই আরাম-বনে অশোকতলায়। মহারাজ বিম্বিসার সেইখানেই নাকি বেদী গড়ে দিয়েছেন।
শ্রীমতী। হাঁ, সত্য।
মালতী। রাজবাড়ির মেয়েরা সন্ধ্যাবেলায় সেখানে পূজা দেন। আমার যদি সে অধিকার না থাকে আমি সেখানে ধুলা ঝাঁট দেব এই আশা করে এখানে গায়িকার দলে ভরতি হয়েছি।
শ্রীমতী। এস এস বোন, ভালো হল। রাজকন্যাদের হাতে পূজার দীপে ধোঁওয়া দেয় বেশি, আলো দেয় কম। তোমার নির্মল