চন্দ্রকান্ত। নবযুগে পুরুষদের কারখানাঘর-আফিসঘরের সামনে ফেমিনিজ্ম্-এর আক্রমণ চলছে, আজ বাসরঘরের সামনে আমরা ম্যাস্কুলিনিজ্ম্ প্রচার করব। আমরা যুগান্তরের পাইওনিয়ার।
বিনোদ। জয়, পুরুষজাতিকী জয়!
চন্দ্রকান্ত। অত্যাচারকারিণীদের সিংহাসন আজ বিচলিত হোক। আবার বলো, জয় পুরুষজাতিকী জয়। গদাই, গদাই, গদাই, গদাধর, ভীরু, ট্রেটর্, এসো তুমি, খোলো রুদ্ধদ্বার, ভাঙো পুরুষজাতির অপমানের বাধা।
বিনোদ। চন্দরদা, ওকে স্পেশ্যাল্ কনশেসন দিয়ে এরা কিনে নিয়েছে — ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি। ওকে সহজে পাওয়া যাবে না।
চন্দ্রকান্ত। সে কিছুতেই হচ্ছে না। আজ অসম্মানিত পুরুষজাতির আহ্বান তার মুগ্ধ হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছবেই। গদাই! গদাধর! বিশ্বাসঘাতক! স্বজাতিবিদ্রোহী কাপুরুষ।
গদাই, ইন্দু ও কমলের প্রবেশ
কমল। এখানে দাঁড়িয়ে আপনারা করছেন কী?
চন্দ্রকান্ত। সিডিশন্।
ইন্দু। আপনাদের সাহস তো কম নয়!
চন্দ্রকান্ত। শর্ট্হ্যান্ড্-লিখিয়ে রিপোর্টার কেউ উপস্থিত ছিল না, তাই ভাষাটা হয়তো কিছু অসংযত হয়েছিল। আর কিছুই নয়, আমরা বলছিলুম, ‘ ভাগ্যদেবীগণ, রুদ্ধদ্বার খোলো — পাপীদের ক্ষমা করবার প্রত্যক্ষ আনন্দটা ভোগ করে নাও, তাতে স্বর্গেরও গৌরব, মর্তেরও পরিত্রাণ '।
ইন্দু। যারা ক্ষমা করবার যোগ্য তাদের তো ক্ষমা হয়ে গেছে।
চন্দ্রকান্ত। এত বড়ো নিষ্ঠুর কথাটা বলতে পারলেন দয়াময়ী? দেবী, আমিই কি পাপিষ্ঠতম? এদের দুজনের চেয়েও অধম?
ইন্দু। তিনি আপনাকে উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
চন্দ্রকান্ত। দেবী, সেটা কি তাঁর পক্ষে আমার চেয়ে কম শোচনীয়? যিনি তারিণী তাঁর জন্যে যদি একটা বাঁধা পাপীর বরাদ্দ না থাকে তবে তো একেবারে বেকার তিনি। যাকে বলে, আনএমপ্লয়মেন্ট প্রব্লেম্! বড়োবউ, তোমার অনুপস্থিতিতে যদি দৈবাৎ আমার সংশোধন হয়ে যায়, যদি তোমার জন্যে সবুর করতে না পারি, যদি পরিত্রাণের দোসরা পথ জুটে যায়, তা হলে সেটাতে কি তোমারই যশ না আমারই!
ক্ষান্তমণির প্রবেশ
ক্ষান্তমণি। আঃ, কী মিছেমিছি চেঁচাচ্ছ!
চন্দ্রকান্ত। মিছেমিছি নয় দেবী! পৃথিবীসুদ্ধ লোক চেঁচাচ্ছে পরিত্রাণের দরবারে — কেউ-বা ধর্মে, কেউ-বা কর্মে, কেউ-বা পলিটিক্সে, আর আমিই যদি চুপ করে থাকব তা হলে নিতান্তই ঠকব যে। এই দুটি ভাগ্যবানদের দিকে তাকিয়ে আমি আর থাকতে পারলুম না। একটু চেঁচিয়েছি, ফলও পেয়েছি — এখন যবনিকাপতনের পূর্বে দয়াময়ীদের বন্দনাটা সেরে নিই।