রত্নাবলী। মহৎ উপদেশ! অর্থাৎ কিনা, মধুরের দ্বারা কটুকে জয় করবে, হাস্যের দ্বারা ভাষ্যকে।
বাসবী। একটু ঝগড়া কর না কেন, শ্রীমতী? এত মধুর কি সহ্য হয়! মানুষকে লজ্জা দেওয়ার চেয়ে মানুষকে রাগিয়ে দেওয়া যে ঢের ভালো।
শ্রীমতী। ভিতরে তেমন ভালো যদি হতেম বাইরে মন্দর ভান করলে সেটা গায়ে লাগত না। কলঙ্কের ভান করা চাঁদকেই শোভা পায়। কিন্তু অমাবস্যা! সে যদি মেঘের মুখোশ পরে?
অজিতা। ঐ দেখো, গ্রামের মেয়েটি অবাক হয়ে ভাবছে, রাজবাড়ির মেয়েগুলোর রসনায় রস নেই, কেবল ধারই আছে। কী তোমার নাম, ভুলে গেছি।
মালতী। মালতী।
অজিতা। কী ভাবছিলে বলো না।
মালতী। দিদিকে ভালোবেসেছি, তাই ব্যথা লাগছিল।
অজিতা। আমরা যাকে ভালোবাসি তাকেই ব্যথা দেবার ছল করি। রাজবাড়ির অলংকারশাস্ত্রের এই নিয়ম। মনে রেখো।
ভদ্রা। মালতী, কী একটা কথা যেন বলতে যাচ্ছিলে? বলেই ফেলো না। আমাদের তুমি কী ভাব জানতে ভারি কৌতূহল হয়।
মালতী। আমি বলতে চাচ্ছিলেম, “হাঁ গা, তোমরা নিজের কথা শুনতেই এত ভালোবাস, গান শোনবার সময় বয়ে যায়।”
সকলের উচ্চহাস্য
বাসবী। হাঁ গা! হাঁ গা! রাজবাড়ির ব্যাকরণচঞ্চুকে ডাকো, তাঁর শিক্ষা সম্বোধনের শেষ পর্যন্ত পৌঁছয়নি।
রত্নাবলী। হাঁ গা বাসবী! হাঁ গা রাজকুলমুকুটমণিমালিকা!
বাসবী। হাঁ গা রত্নাবলী! হাঁ গা ভুবনমোহনলাবণ্যকৌমুদী— ব্যাকরণের এ কী নূতন সম্পদ। সম্বোধনে হাঁ গা।
মালতী। দিদি, এঁরা কি আমার উপরে রাগ করেছেন?
নন্দা। ভয় নেই তোমার মালতী। দিগ্বালিকারা শিউলিবনে যখন শিল বৃষ্টি করে তখন রাগ ক’রে করে না, তাদের আদর করবার প্রথাই ওই।
অজিতা। ওই দেখো, শ্রীমতী মনে মনেই গান গেয়ে যাচ্ছে। আমাদের কথা ওর কানেই পৌঁছচ্ছে না। শ্রীমতী, গলা ছেড়ে গাও না, আমরাও যোগ দেব।
শ্রীমতীর গান
নিশীথে কী কয়ে গেল মনে,
কী জানি, কী জানি!
সে কি ঘুমে সে কি জাগরণে
কী জানি, কী জানি!
নানাকাজে নানামতে
ফিরি ঘরে, ফিরি পথে—
সে-কথা কি অগোচরে বাজে ক্ষণে ক্ষণে
কী জানি, কী জানি!