প্রথম শোণপাংশু। কেন, লোহা কী অপরাধটা করেছে।
পঞ্চক। আরে, ওটা যে লোহা সে তো তোকে মানতেই হবে।
প্রথম শোণপাংশু। তা তো হবে।
পঞ্চক। তবে আর কি—এই বুঝে নে না।
দ্বিতীয় শোণপাংশু। তবু একটা তো কারণ আছে।
পঞ্চক। কারণ নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু কেবল সেটা পুথির মধ্যে। সুতরাং মহাপঞ্চকদাদা ছাড়া আর অতি অল্প লোকেরই জানবার সম্ভাবনা আছে। সাধে মহাপঞ্চকদাদাকে ওখানকার ছাত্রেরা একেবারে পূজা করে! যা হোক ভাই, তোরা যে আমাকে ক্রমেই আশ্চর্য করে দিলি রে। তোরা তো খেঁসারিডাল চাষ করছিস আবার লোহাও পিটোচ্ছিস, এখনো তোরা কোনো দিক থেকে কোনো পাঁচ-চোখ কিংবা সাত-মাথাওয়ালার কোপে পড়িস নি?
প্রথম শোণপাংশু। যদি পড়ি তবে আমাদেরও লোহা আছে, তারও কোপ বড়ো কম নয়।
পঞ্চক। আচ্ছা, তোদের মন্ত্র কেউ পড়ায় নি?
দ্বিতীয় শোণপাংশু। মন্ত্র! কিসের মন্ত্র।
পঞ্চক। এই মনে কর্ যেমন বজ্রবিদারণ মন্ত্র—তট তট তোতয় তোতয়—
তৃতীয় শোণপাংশু। ওর মানে কী!
পঞ্চক। আবার! মানে! তোর আস্পর্ধা তো কম নয়। সব কথাতেই মানে! কেয়ূরী মন্ত্রটা জানিস?
প্রথম শোণপাংশু। না।
পঞ্চক। মরীচি?
প্রথম শোণপাংশু। না।
পঞ্চক। মহাশীতবতী?
প্রথম শোণপাংশু। না।
পঞ্চক। উষ্ণীষবিজয়?
প্রথম শোণপাংশু। না।
পঞ্চক। নাপিত ক্ষৌর করতে করতে যেদিন তোদের বাঁ গালে রক্ত পাড়িয়ে দেয় সেদিন করিস কী।
তৃতীয় শোণপাংশু। সে দিন নাপিতের দুই গালে চড় কষিয়ে দিই।
পঞ্চক। না রে না, আমি বলছি সে দিন নদী পার হবার দরকার হলে তোরা খেয়া-নৌকোয় উঠতে পারিস?
তৃতীয় শোণপাংশু। খুব পারি।
পঞ্চক। ওরে, তোরা আমাকে মাটি করলি রে। আমি আর থাকতে পারছি নে। তোদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে আর সাহস হচ্ছে না। এমন জবাব যদি আর-একটা শুনতে পাই তা হলে তোদের বুকে করে পাগলের মতো নাচব, আমার জাত-মান কিছু থাকবে না। ভাই, তোরা সব কাজই করতে পাস? তোদের দাদাঠাকুর কিছুতেই তোদের মানা করে না?
সব কাজে হাত লাগাই মোরা সব কাজেই।