Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)


আত্মপরিচয়- ১, ৭
আত্মপরিচয় ১

গলায়ে গলায়ে বাসনার সোনা

প্রতিদিন আমি করেছি রচনা

তোমার ক্ষণিক খেলার লাগিয়া

মূরতি নিত্যনব।

আশ্চর্য এই যে, আমি হইয়া উঠিতেছি, আমি প্রকাশ পাইতেছি। আমার মধ্যে কী অনন্ত মাধুর্য আছে, যেজন্য আমি অসীম ব্রহ্মাণ্ডের অগণ্য সূর্যচন্দ্রগ্রহতারকার সমস্ত শক্তি দ্বারা লালিত হইয়া, এই আলোকের মধ্যে আকাশের মধ্যে চোখ মেলিয়া দাঁড়াইয়াছি — আমাকে কেহ ত্যাগ করিতেছে না। মনে কেবল এই প্রশ্ন উঠে, আমি আমার এই আশ্চর্য অস্তিত্বের অধিকার কেমন করিয়া রক্ষা করিতেছি — আমার উপরে যে প্রেম, যে আনন্দ অশ্রান্ত রহিয়াছে, যাহা না থাকিলে আমার থাকিবার কোনো শক্তিই থাকিত না, আমি তাহাকে কি কিছুই দিতেছি না?

আপনি বরিয়া লয়েছিলে মোরে

না জানি কিসের আশে,

লেগেছি কি ভালো, হে জীবননাথ,

আমার রজনী আমার প্রভাত

আমার নর্ম আমার কর্ম

তোমার বিজন বাসে?

বরষা শরতে বসন্তে শীতে

ধ্বনিয়াছে হিয়া যত সংগীতে

শুনেছ কি তাহা একেলা বসিয়া

আপন সিংহাসনে?

মানসকুসুম তুলি অঞ্চলে

গেঁথেছ কি মালা, পরেছ কি গলে,

আপনার মনে করেছ ভ্রমণ

মম যৌবনবনে?

কী দেখিছ বঁধু মরমমাঝারে

রাখিয়া নয়ন দুটি?

করেছ কি ক্ষমা যতেক আমার

স্খলন পতন ত্রুটি?

পূজাহীন দিন, সেবাহীন রাত,

কত বার বার ফিরে গেছে নাথ,

অর্ঘ্যকুসুম ঝরে পড়ে গেছে

বিজন বিপিনে ফুটি।

যে সুরে বাঁধিলে এ বীণার তার