বিক্রম। শোন কেন? এখানে রাজা নেই বলেই যে-খুশি নির্ভাবনায় আপনাকে রাজা বলে পরিচয় দেয়। দেখছ-না, যেন সেজে এসেছে – অত্যন্ত বেশি সাজ।
বসুসেন। কিন্তু লোকটাকে দেখাচ্ছে ভালো, চোখ ভোলাবার মতো চেহারাটা আছে।
বিক্রম। চোখ ভুলতে পারে কিন্তু ভালো করে তাকালেই ভুল থাকে না। আমি তোমাদের সামনেই ওর ফাঁকি ধরে দিচ্ছি।
সুবর্ণ। রাজগণ, স্বাগত। এখানে তোমাদের অভ্যর্থনার কোনো ত্রুটি হয় নি তো?
রাজগণ। (কপট বিনয়ে নমস্কার করিয়া) কিছু না।
বিক্রম। যে অভাব ছিল তা মহারাজের দর্শনেই পূর্ণ হয়েছে।
সুবর্ণ। আমি সাধারণের দর্শনীয় নই কিন্তু তোমরা আমার অনুগত, এই জন্যই একবার দেখা দিতে এলুম।
বিক্রম। অনুগ্রহের এত আতিশয্য সহ্য করা কঠিন।
সুবর্ণ। আমি অধিকক্ষণ থাকব না।
বিক্রম। সেটা অনুভবেই বুঝেছি — বেশিক্ষণ স্থায়ী হবার ভাব দেখছি নে।
সুবর্ণ। ইতিমধ্যে যদি কোনো প্রার্থনা থাকে —
বিক্রম। আছে বৈকি। কিন্তু অনুচরদের সামনে জানাতে লজ্জা বোধ করি।
সুবর্ণ। (অনুবর্তীদের প্রতি) ক্ষণকালের জন্য তোমরা দূরে যাও —(রাজগণের প্রতি) এইবার তোমাদের প্রার্থনা অসংকোচে জানাতে পারো।
বিক্রম। অসংকোচেই জানাব — তোমারও যেন লেশমাত্র সংকোচ না হয়।
সুবর্ণ। না, সে আশঙ্কা কোরো না।
বিক্রম। এস তবে — মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে আমাদের প্রত্যেককে প্রণাম করো।
সুবর্ণ। বোধ হচ্ছে আমার ভৃত্যগণ বারুণী মদ্যটা রাজশিবিরে কিছু মুক্তহস্তেই বিতরণ করেছে।
বিক্রম। ভণ্ডরাজ, মদ যাকে বলে সেটা তোমার ভাগেই অতিমাত্রায় পড়েছে সেই জন্যেই এখন ধুলোয় লোটাবার অবস্থা হয়েছে।
সুবর্ণ। রাজগণ, পরিহাসটা রাজোচিত নয়।
বিক্রম। পরিহাসের অধিকার যাদের আছে তারা নিকটেই প্রস্তুত। সেনাপতি!
সুবর্ণ। আর প্রয়োজন নেই। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি আপনারা আমার প্রণম্য। মাথা আপনিই নত হচ্ছে, কোনো তীক্ষ্ণ উপায়ে তাকে ধুলায় টানবার দরকার হবে না। আপনারা যখন আমাকে চিনেছেন তখন আমিও আপনাদের চিনে নিলুম। অতএব এই আমার প্রণাম গ্রহণ করুন। যদি দয়া করে পালাতে অনুমতি দেন তাহলে বিলম্ব করব না।
বিক্রম। পালাবে কেন? তোমাকেই আমরা এখানকার রাজা করে দিচ্ছি—পরিহাসটা শেষ করেই যাওয়া যাক। দলবল কিছু আছে?
সুবর্ণ। আছে। আরম্ভে যখন আমার দল বেশি ছিল না, তখন সবাই সন্দেহ করছিল – লোক যত বেড়ে গেল, সন্দেহ ততই দূর হল। এখন ভিড়ের লোক নিজেদের ভিড় দেখেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমাকে কোনো কষ্ট পেতে হচ্ছে না।
বিক্রম। বেশ কথা। এখন থেকে আমরা তোমায় সাহায্য করব। কিন্তু তোমাকে আমাদেরও একটা কাজ করে দিতে হবে।