রত্নাবলী। ওই নটীর ’পরে মহারানীর এখনো দয়া আছে দেখছি।
লোকেশ্বরী। দয়া! কুকুর দিয়ে ওর মাংস ছিঁড়ে খাওয়াতে পারি। আমার দয়া! অনেকদিন ওখানে নিজের হাতে পূজা দিয়েছি। পূজার বেদী ভেঙে পড়বে সেও সইতে পারি। কিন্তু রাজরানীর পূজার আসনে আজ নটীর চরণাঘাত!
রত্নাবলী। প্রগল্ভতা মাপ করবেন। ওইটুকু ব্যথাকে যদি প্রশ্রয় দেন তবে ওই ব্যথার উপরেই ভাঙা পূজার বেদী বারেবারে গড়ে উঠবে।
লোকেশ্বরী। সে-ভয় মনে একেবারে নেই তা নয়।
রত্নাবলী। মোহে পড়ে যে-মিথ্যাকে মান দিয়েছিলেন তাকে দূরে সরিয়ে দিলেই মোহ কাটে না। সেই মিথ্যাকে অপমান করুন তবে মুক্তি পাবেন।
লোকেশ্বরী। মল্লিকা, ওই শোনো। উদ্যানের উত্তর দিক থেকে শব্দ আসছে। ভেঙে ফেললে, সব ভেঙে ফেললে। ওঁ নমো—যাক যাক ভেঙে যাক।
রত্নাবলী। চলো না, মহারানী, দেখে আসি গে!
লোকেশ্বরী। যাব যাব, কিন্তু এখনো না।
রত্নাবলী। আমি দেখে আসি গে।
লোকেশ্বরী। মল্লিকা, বাঁধন ছিঁড়তে বড়ো বাজে।
মল্লিকা। তোমার চোখ দিয়ে যে জল পড়ছে।
লোকেশ্বরী। ওই শোনো না, “জয় কালী করালী”— অন্য ধ্বনিটা ক্ষীণ হয়ে এল, এ আমি সইতে পারছি নে।
মল্লিকা। বুদ্ধের ধর্মকে নির্বাসিত করলে আবার ফিরে আসবে—অন্য ধর্ম দিয়ে চাপা না দিলে শান্তি নেই। দেবদত্তের কাছে যখন নূতন মন্ত্র নেবে তখনই সান্ত্বনা পাবে।
লোকেশ্বরী। ছি ছি, বলো না, বলো না, মুখে এনো না। দেবদত্ত ক্রূর সর্প, নরকের কীট। যখন অহিংসাব্রত নিয়েছিলেম তখনো মনে মনে তাকে প্রতিদিন দগ্ধ করেছি, বিদ্ধ করেছি। আর আজ! যে-আসনে আমার সেই পরমনির্মল জ্যোতির্ভাসিত মহাগুরুকে নিজে এনে বসিয়েছি তাঁর সেই আসনেই দেবদত্তকে ডেকে আনব! (জানু পাতিয়া) ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো। দ্বারত্রয়েণ কৃতং সর্বং অপরাধং ক্ষমতু মে প্রভো।
উঠিয়া। ভয় নেই, মল্লিকা, ভিতরে উপাসিকা আছে সে ভিতরেই থাক্, বাইরে আছে নিষ্ঠুরা, আছে রাজকুলবধূ তাকে কেউ পরাস্ত করতে পারবে না। মল্লিকা, আমার নির্জন ঘরে গিয়ে বসি গে, যখন ধুলার সমুদ্রে আমার এতকালের আরাধনার তরণী একেবারে ডুবে যাবে তখন আমাকে ডেকো।
একদল নারীর প্রবেশ। পুষ্পপাত্রকে ঘিরিয়া সকলে
পূজয়ামি মুনিন্দস্স সিরি-পাদ-সরোরুহে।