চাঁদের মতো অলখ টানে
জোয়ারে ঢেউ তোলাব॥
সুদর্শনা। কিন্তু কেন সে আমাকে জোর করে পথ আটকায় না? কেশের গুচ্ছ ধরে কেন সে আমাকে টেনে রেখে দেয় না? আমাকে কিছু সে বলছে না, সেই জন্যেই আরও অসহ্য বোধ হচ্ছে।
সুরঙ্গমা। রাজা কিছু বলছে না, কে তোমাকে বললে?
সুদর্শনা। অমন করে নয়, চীৎকার করে বজ্রগর্জনে — আমার কান থেকে অন্য সকল কথা ডুবিয়ে দিয়ে। রাজা, আমাকে এত সহজে ছেড়ে দিয়ো না, যেতে দিয়ো না।
সুরঙ্গমা। ছেড়ে দেবেন, কিন্তু যেতে দেবেন কেন?
সুদর্শনা। যেতে দেবেন না? আমি যাবই।
সুরঙ্গমা। আচ্ছা যাও।
সুদর্শনা। আমার দোষ নেই। আমাকে জোর করে তিনি ধরে রাখতে পারতেন কিন্তু রাখলেন না। আমাকে বাঁধলেন না — আমি চললুম। এইবার তাঁর প্রহরীদের হুকুম দিন, আমাকে ঠেকাক।
সুরঙ্গমা। কেউ ঠেকাবে না। ঝড়ের মুখে ছিন্ন মেঘ যেমন অবাধে চলে তেমনি তুমি অবাধে চলে যাও।
সুদর্শনা। ক্রমেই বেগ বেড়ে উঠছে — এবার নোঙর ছিঁড়ল। হয়তো ডুবব কিন্তু আর ফিরব না।
প্রথম। এটি ঘটালেন আমাদের রাজকন্যা সুদর্শনা।
দ্বিতীয়। সকল সর্বনাশের মূলেই স্ত্রীলোক আছে। বেদেই তো আছে,— কী আছে বলো-না হে বটুকেশ্বর— তুমি বামুনের ছেলে।
তৃতীয়। আছে, আছে বৈকি। বেদে যা খুঁজবে তাই পাওয়া যাবে— অষ্টাবক্র বলেছেন, নারীণাঞ্চ নখিনাঞ্চ শৃঙ্গিণাং শস্ত্রপাণিনাং—অর্থাৎ কিনা–
দ্বিতীয়। আরে, বুঝেছি বুঝেছি – আমি থাকি তর্করত্নপাড়ায়— অনুস্বার -বিসর্গের একটা ফোঁটা আমার কাছে এড়াবার জো নেই।
প্রথম। আমাদের এ হল যেন কলির রামায়ণ। কোথা থেকে ঘরে ঢুকে পড়ল দশমুণ্ড রাবণ, আচমকা লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দিল।