লোক লোক ভুলুক শোক, খণ্ডন কর’ মোহ,
উজ্জ্বল হোক জ্ঞান-সূর্য উদয়-সমারোহ,
প্রাণ লভুক সকল ভুবন নয়ন লভুক অন্ধ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর কলঙ্কশূন্য।
ক্রন্দনময় নিখিল হৃদয় তাপদহনদীপ্ত,
বিষয়বিষ-বিকারজীর্ণ দীর্ণ অপরিতৃপ্ত।
দেশ দেশ পরিল তিলক রক্ত কলুষ গ্লানি,
তব মঙ্গলশঙ্খ আন’ তব দক্ষিণ পাণি,
তব শুভসংগীতরাগ তব সুন্দর ছন্দ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর কলঙ্কশূন্য।
মালতী। দিদি, শান্তি পাচ্ছিনে।
শ্রীমতী। কী হয়েছে।
মালতী। তোমাকে যখন ওরা নাচের সাজ করাতে নিয়ে গেল আমি চুপি চুপি ওই প্রাচীরের কাছে গিয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে দেখলেম। দেখি ভিক্ষুণী উৎপলপর্ণার মৃতদেহ নিয়ে চলেছে আর,—
শ্রীমতী। থামলে কেন? বলো।
মালতী। রাগ করবে না দিদি? আমি বড়ো দুর্বল।
শ্রীমতী। কিছুতেই না।
মালতী। দেখলেম অন্ত্যেষ্টিমন্ত্র পড়তে পড়তে শবদেহের সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিলেন।
শ্রীমতী। কে যাচ্ছিলেন?
মালতী। দূর থেকে মনে হল যেন তিনি।
শ্রীমতী। অসম্ভব নেই।
মালতী। পণ করেছিলেম, মুক্তি যতদিন না পাই তাঁকে দূর থেকেও দেখব না।
শ্রীমতী। রক্ষা করিস সেই পণ। সমুদ্রের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকলেই তো পার দেখা যায় না। দুরাশায় মনকে প্রশ্রয় দিসনে।
মালতী। তাঁকে দেখবার আশায় মনকে আকুল করছি মনে করো না। ভয় হচ্ছে ওঁকে তারা মারবে তাই কাছে থাকতে চাই।