মেজো সর্দার। বুঝছ না? আমাদের তো শুধু একটা চেহারা, সর্দারের চেহারা। কিন্তু ওর-যে এক পিঠে গোঁসাই, আর-এক পিঠে সর্দার। নামাবলিটা একটু ফেঁসে গেলেই সেটা ফাঁস হয়ে পড়ে। তাই সর্দারিধর্মটা নিজের অগোচরে পালন করতে হয়, তা হলে নামজপের বেলায় খুব বেশি বাধে না।
সর্দার। নামজপটা নাহয় ছেড়েই দিত।
মেজো সর্দার। কিন্তু এ দিকে যে ওর মনটা ধর্মভীরু, রক্তটা যাই হোক। তাই স্পষ্টভাবে নামজপ আর অস্পষ্টভাবে সর্দারি করতে পারলে ও সুস্থ থাকে। ও আছে বলেই আমাদের দেবতা আরামে আছে, তার কলঙ্ক ঢাকা পড়েছে, নইলে চেহারাটা ভালো দেখাত না।
সর্দার। মেজো সর্দার, তোমারও দেখেছি রক্তের সঙ্গে সর্দারির রক্তের মিল হয় নি।
মেজো সর্দার। রক্ত শুকিয়ে এলেই বালাই থাকবে না, এখনো সে আশা আছে। কিন্তু আজও তোমার ঐ তিনশো-একুশকে সইতে পারি নে। যাকে দূর থেকে চিমটে দিয়ে ছুঁতেও ঘেন্না করে, তাকে যখন সভার মাঝখানে সুহৃদ বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে হয়, তখন কোনো তীর্থজলে সনান করে নিজেকে শুচি বোধ হয় না। — ঐ-যে নন্দিনী আসছে।
সর্দার। চলে এসো, মেজো সর্দার।
মেজো সর্দার। কেন। ভয় কিসের।
সর্দার। তোমাকে বিশ্বাস করি নে; আমি জানি, তোমার চোখে নন্দিনীর ঘোর লেগেছে।
মেজো সর্দার। কিন্তু তুমি জানো না যে, তোমার চোখেও কর্তব্যের রঙের সঙ্গে রক্তকরবীর রঙ কিছু যেন মিশেছে, তাতেই রক্তিমা এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠল।
সর্দার। তা হবে, মনের কথা মন নিজেও জানে না। তুমি চলে এসো আমার সঙ্গে।
নন্দিনী। দেখতে দেখতে সিঁদুরে মেঘে আজকের গোধূলি রাঙা হয়ে উঠল। ঐ কি আমাদের মিলনের রঙ। আমার সিঁথের সিঁদুর যেন সমাপ্ত আকাশে ছড়িয়ে গেছে। (জানলায় ঘা দিয়ে) শোনো, শোনো, শোনো। দিনরাত এখানে পড়ে থাকব, যতক্ষণ না শোনো।
গোঁসাই। ঠেলছ কাকে।
নন্দিনী। তোমাদের যে-অজগর আড়ালে থেকে মানুষ গেলে তাকে।
গোঁসাই। হরি হরি, ভগবান যখন ছোটোকে মারেন তখন তার ছোটোমুখে বড়োকথা দিয়েই মারেন। দেখো নন্দিনী, তুমি নিশ্চয় জেনো, আমি তোমার মঙ্গল চিন্তা করি।
নন্দিনী। তাতে আমার মঙ্গল হবে না।
গোঁসাই। এসো আমার ঠাকুরঘরে, তোমাকে নাম শোনাইগে।
নন্দিনী। শুধু নাম নিয়ে করব কী।
গোঁসাই। মনে শান্তি পাবে!