রত্নাবলী। ও যদি তিরস্কার ক’রে ফিরে ফেলে দেয় তোমার গায়ে। যদি না নেয়।
বাসবী। (ছুরি দেখাইয়া) তখন এই আছে।
রত্নাবলী। শীঘ্র ডেকে আনো মহারানী লোকেশ্বরীকে, তিনি খুব আমোদ পাবেন।
বাসবী। আসবার সময় খুঁজেছিলেম তাঁকে। শুনলেম ঘরে দ্বার দিয়ে আছেন। একি রাষ্ট্রবিপ্লবের ভয়ে না স্বামীর ’পরে অভিমানে? বোঝা গেল না।
রত্নাবলী। কিন্তু আজ হবে নটীর নতিনাট্য, তাতে মহারানীর উপস্থিত থাকা চাই।
বাসবী। নটীর নতিনাট্য! নামটি বেশ বানিয়েছ।
মল্লিকা। যা মনে করেছিলেম তাই ঘটেছে। রাজ্যে যেখানে যত বুদ্ধের শিষ্য আছে মহারাজ অজাতশত্রু সবাইকে ডাকতে দূত পাঠিয়েছেন। এমনি করে গ্রহপূজা চলছেই, কখনো বা শনিগ্রহ কখনো বা রবিগ্রহ।
রত্নাবলী। ভালোই হয়েছে। বুদ্ধের সব-কটি শিষ্যকেই দেবদত্তের শিষ্যদের হাতে একসঙ্গে সমর্পণ করে দিন। তাতে সময়-সংক্ষেপ হবে।
মল্লিকা। সেজন্যে নয়। ওরা রাজার হয়ে অহোরাত্র পাপমোচন মন্ত্র পড়তে আসছে। মহারাজ একেবারে অভিভূত হয়ে পড়েছেন।
বাসবী। কেন এই দুর্বলতা?
মল্লিকা। লোকে কি বলছে শোননি বুঝি? দেবদত্তের শিষ্যদের মহারাজ এখন আর নিজেই সামলাতে পারছেন না।
বাসবী। তাতে কী হয়েছে?
মল্লিকা। কী আশ্চর্য। এখনো জনশ্রুতি তোমার কানে পৌঁছয় নি! সবাই অনুমান করছে, পথের মধ্যে ওরা বিম্বিসার মহারাজকে হত্যা করেছে।
বাসবী। সর্বনাশ। এ কখনো সত্য হতেই পারে না।
মল্লিকা। কিন্তু এটা সত্য যে, মহারাজকে যেন আগুনের জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি কোন্ একটা অনুশোচনায় ছটফট করে বেড়াচ্ছেন।
বাসবী। হায়, হায়, এ কী সংবাদ।
রত্নাবলী। লোকেশ্বরী মহারানী কি শুনেছেন?
মল্লিকা। এতবড়ো অপ্রিয় সংবাদ তাঁকে যে শোনাবে তাকে তিনি দুখানা করে ফেলবেন। কেউ সাহস পাচ্ছে না।
বাসবী। সর্বনাশ হল। এতবড়ো পাপের আঘাত থেকে রাজবাড়ির কেউ বাঁচবে না। ধর্মকে নিয়ে যা খুশি করতে গেলে কি সহ্য হয়!
রত্নাবলী। ঐ রে! বাসবী আবার দেখছি নটীর চেলা হবার দিকে ঝুঁকছে। ভয়ের তাড়া খেলেই ধর্মের মূঢ়তার পিছনে মানুষ লুকোতে চেষ্টা করে।
বাসবী। কখনো না। আমি কিছু ভয় করিনে। ভদ্রাকে এই খবরটা দিয়ে আসিগে।
রত্নাবলী। মিথ্যা ছুতো করে পালিয়ো না। ভয় তুমি পেয়েছ। তোমাদের এই অবসাদ দেখলে আমার বড়ো লজ্জা করে। এ কেবল নীচসংসর্গের ফল।