নন্দিনী। শান্তি যদি পাই তবে ধিক্ ধিক্ ধিক্ আমাকে। আমি এই দরজায় অপেক্ষা করে বসে থাকব।
গোঁসাই। দেবতার চেয়ে মানুষের ’পরে তোমার বিশ্বাস বেশি?
নন্দিনী। তোমাদের ঐ ধ্বজদণ্ডের দেবতা, সে কোনোদিনই নরম হবে না। কিন্তু জালের আড়ালের মানুষ চিরদিনই কি জালে বাঁধা থাকবে। যাও যাও, যাও। মানুষের প্রাণ ছিঁড়ে নিয়ে তাকে নাম দিয়ে ভোলাবার ব্যবসা তোমার।
ফাগুলাল। বিশু তোমার সঙ্গে এল, সে এখন কোথায়। সত্য করে বলো।
নন্দিনী। তাকে বন্দী করে নিয়ে গেছে।
চন্দ্রা। রাক্ষসী, তুই তাকে ধরিয়ে দিয়েছিস! তুই ওদের চর।
নন্দিনী। কোন্ মুখে এমন কথা বলতে পারলে।
চন্দ্রা। নইলে এখানে তোর কী কাজ। কেবল সবার মন ভুলিয়ে ভুলিয়ে ঘুরে বেড়াস।
ফাগুলাল। এখানে সবাই সবাইকে সন্দেহ করে, কিন্তু তবু তোমাকে আমি বিশ্বাস করে এসেছি। মনে মনে তোমাকে— সে কথা থাক্। কিন্তু আজ কেমনতরো ঠেকছে যে।
নন্দিনী। হবে, তা হবে। আমার সঙ্গে এসেই বিপদে পড়েছে। তোমাদের কাছে নিরাপদে থাকত, সে কথা নিজেই বললে।
চন্দ্রা। তবে কেন আনলি ওকে ভুলিয়ে সর্বনাশী!
নন্দিনী। ও-যে বললে, ও মুক্তি চায়।
চন্দ্রা। ভালো মুক্তি দিয়েছিস ওকে।
নন্দিনী। আমি তো ওর সব কথা বুঝতে পারি নে, চন্দ্রা। ও কেন আমাকে বললে, বিপদের তলায় তলিয়ে গিয়ে তবে মুক্তি। ফাগুলাল, নিরাপদের মার থেকে মুক্তি চায় যে-মানুষ, আমি তাকে বাঁচাব কী করে।
চন্দ্রা। ও-সব কথা বুঝি নে। ওকে ফিরিয়ে যদি না আনতে পারিস মরবি, মরবি। তোর ঐ সুন্দরপানা মুখখানা দেখে আমি ভুলি নে।
ফাগুলাল। চন্দ্রা, মিছে বকাবকি করে কী হবে। কারিগরপাড়া থেকে দলবল জুটিয়ে আনি। বন্দীশালা চুরমার করে ভাঙব।
নন্দিনী। আমি যাব তোমাদের সঙ্গে।
ফাগুলাল। কী করতে যাবে।
নন্দিনী। ভাঙতে যাব।
চন্দ্রা। ওগো, অনেক ভাঙন ভেঙেছ মায়াবিনী! আর কাজ নেই।
গোকুল। সবার আগে ঐ ডাইনীকে পুড়িয়ে মারতে হবে।
চন্দ্রা। মারবে? তাতে ওর শাস্তি হবে না। যে রূপ নিয়ে ও সর্বনাশ করে, সেই রূপটা দাও ঘুচিয়ে। খুরপো দিয়ে যেমন করে ঘাস নিড়োয়, তেমনি করে ওর রূপ দাও নিড়িয়ে।
গোকুল। তা পারি। একবার তুই হাতুড়ির নাচনটা—