গীতহীন

            চলে গেছে মোর বীণাপাণি

            কতদিন হল সে না জানি।

কী জানি কী অনাদরে              বিস্মৃত ধূলির প’রে

           ফেলে রেখে গেছে বীণাখানি।

ফুটেছে কুসুমরাজি —               নিখিল জগতে আজি

            আসিয়াছে গাহিবার দিন,

মুখরিত দশ দিক,                  অশ্রান্ত পাগল পিক,

            উচ্ছ্বসিত বসন্তবিপিন।

বাজিয়া উঠেছে ব্যথা,               প্রাণ - ভরা ব্যাকুলতা,

            মনে ভরি উঠে কত বাণী,

বসে আছি সারাদিন                 গীতিহীন স্তুতিহীন —

             চলে গেছে মোর বীণাপাণি।

 

আর সে নবীন সুরে                 বীণা উঠিবে না পুরে,

             বাজিবে না পুরানো রাগিণী ;

যৌবনে যোগিনীমত,               লয়ে নিত্য মৌনব্রত

              তুই বীণা রবি উদাসিনী।

কে বসিবে এ আসনে               মানসকমলবনে,

             কার কোলে দিব তোরে আনি —

থাক্‌ পড়ে ওইখানে                 চাহিয়া আকাশপানে —

               চলে গেছে মোর বীণাপাণি।

 

কখনো মনের ভুলে                যদি এরে লই তুলে

             বাজে বুকে বাজাইতে বীণা ;

যদিও নিখিল ধরা                   বসন্তে সংগীত ভরা,

             তবু আজি গাহিতে পারি না।

কথা আজি কথাসার,               সুর তাহে নাহি আর,

               গাঁথা ছন্দ বৃথা বলে মানি —

অশ্রুজলে ভরা প্রাণ,               নাহি তাহে কলতান —

              চলে গেছে মোর বীণাপাণি।