মহুয়া

     চেয়ে চেয়ে দ্বিধা লাগে শেষে

বৃষ্টি হতে হতে দেখি শিলা পড়ে এসে।

একদিন রৌদ্রের বেলায়

     মধ্যাহ্নের জনতার মুখর মেলায়

          রাজপথ-পাশে

দাঁড়াইনু — দেখিলাম যারা যায় আসে

          তাহাদের কায়া

সম্মুখে ফেলিয়া চলে দীর্ঘতর ছায়া।

          শুনিলাম স্পর্ধাতীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর

ছিন্ন করে দিতে চাহে দেবতার অখণ্ড অম্বর।

          উজ্জল সজ্জায়

দীন অঙ্গ সমাচ্ছন্ন ধনের লজ্জায়।

          ছুটে চলে অশ্বরথ,

তার চেয়ে আড়ম্বরে সঙ্গে ওড়ে ধূলির পর্বত।

যখন সেদিন সেই ঊর্ধ্বশ্বাস লুব্ধ ঠেলাঠেলি

          নানা শব্দে উঠিছে উদ্‌বেলি

তুমি দেখি পথপ্রান্তে একা হাস্যমুখে

          নিঃশব্দ কৌতুকে

চেয়ে আছ — হৃদয় আছিল জনস্রোতে,

        মন ছিল দূরে সবা হতে।

তুমি যেন মহাকালসমুদ্রের তটে

          নিত্যের নিশ্চল চিত্তপটে

       দেখেছিলে চঞ্চলের চলমান ছবি,

শুনেছিলে ভৈরবের ধ্যান-মাঝে উমার ভৈরবী।

          রহে গেল জনতার ঢেউ,

     কে-যে তুমি কোথা আছ দেখে নাই কেউ।

 

একা আমি দেখেছি তোমারে —

তুমিই ফেল নি ছায়া ছায়ার মাঝারে।

মালা হাতে গেনু ধেয়ে,

     হাসিলে আমার পানে চেয়ে ।

          মোর স্বয়ম্বরে

সেদিন মর্ত্যের মুখ ভ্রূকুটিল অবজ্ঞার ভরে।