বর্ষাযাপন
      রাজধানী কলিকাতা;  তেতালার ছাতে
            কাঠের কুঠরি এক ধারে;
       আলো আসে পূর্ব দিকে প্রথম প্রভাতে,
            বায়ু আসে দক্ষিণের দ্বারে।

     মেঝেতে বিছানা পাতা,           দুয়ারে রাখিয়া মাথা
                        বাহিরে আঁখিরে দিই ছুটি,
     সৌধ-ছাদ শত শত               ঢাকিয়া রহস্য কত
                       আকাশেরে করিছে ভ্রূকুটি।
     নিকটে জানালা-গায়             এক কোণে আলিসায়
                      একটুকু সবুজের খেলা,
     শিশু অশথের গাছ                আপন ছায়ার নাচ
                      সারা দিন দেখিছে একেলা।
     দিগন্তের চারি পাশে            আষাঢ় নামিয়া আসে,
                      বর্ষা আসে হইয়া ঘোরালো,
     সমস্ত আকাশজোড়া             গরজে ইন্দ্রের ঘোড়া
                      চিকমিকে বিদ্যুতের আলো।
     চারি দিকে অবিরল                ঝরঝর বৃষ্টিজল
                     এই ছোটো প্রান্ত-ঘরটিরে
     দেয় নির্বাসিত করি            দশ দিক অপহরি
                    সমুদয় বিশ্বের বাহিরে।
     বসে বসে সঙ্গীহীন            ভালো লাগে কিছুদিন
                   পড়িবারে মেঘদূতকথা—
     বাহিরে দিবস রাতি         বায়ু করে মাতামাতি
                  বহিয়া বিফল ব্যাকুলতা;
      বহুপূর্ব আষাঢ়ের               মেঘাচ্ছন্ন ভারতের
                 নগ-নদী-নগরী বাহিয়া
      কত শ্রুতিমধু নাম             কত দেশ কত গ্রাম
                দেখে যাই চাহিয়া চাহিয়া।
      ভালো করে দোঁহে চিনি,         বিরহী ও বিরহিণী