সোনার তরী

               স্তব্ধ নেত্র খুলি —

মাঝে মাঝে রাত্রিবেলা    উঠ পক্ষ ঝাপটিয়া,

               বক্ষ উঠে দুলি।

 

যে     সুদূর     সমুদ্রের    পরপার-রাজ্য    হতে

               আসিয়াছ হেথা,

এনেছ   কি   সেথাকার      নূতন   সংবাদ    কিছু

               গোপন বারতা।

সেথা   শব্দহীন   তীরে   ঊর্মিগুলি তালে তালে

               মহামন্দ্রে বাজে,

সেই   ধ্বনি   কী   করিয়া   ধ্বনিয়া   তুলিছ   মোর

               ক্ষুদ্র বক্ষোমাঝে।

রাত্রি   দিন         ধুক ধুক     হৃদয়পঞ্জর-তটে

               অনন্তের ঢেউ,

অবিশ্রাম       বাজিতেছে    সুগম্ভীর    সমতানে

                শুনিছে না কেউ।

আমার    এ    হৃদয়ের   ছোটোখাটো   গীতগুলি,

               স্নেহ-কলরব,

তারি    মাঝে   কে   আনিল   দিশাহীন   সমুদ্রের

               সংগীত ভৈরব।

 

তুই   কি   বাসিস ভালো   আমার   এ   বক্ষোবাসী

               পরান-পক্ষীরে,

তাই এর পার্শ্বে এসে     কাছে বসেছিস ঘেঁষে

               অতি ধীরে ধীরে?

দিনরাত্রি    নির্নিমেষে    চাহিয়া   নেত্রের    পানে

               নীরব সাধনা,

নিস্তব্ধ     আসনে     বসি     একাগ্র    আগ্রহভরে

               রুদ্র আরাধনা।

চপল   চঞ্চল   প্রিয়া   ধরা    নাহি    দিতে    চায়,

               স্থির নাহি থাকে,

মেলি    নানাবর্ণ   পাখা   উড়ে   উড়ে   চলে   যায়