বিদায়
অকূল সাগর-মাঝে চলেছে ভাসিয়া
জীবনতরণী। ধীরে লাগিছে আসিয়া
তোমার বাতাস, বহি আনি কোন্‌ দূর
পরিচিত তীর হতে কত সুমধুর
পুষ্পগন্ধ, কত সুখস্মৃতি, কত ব্যথা,
আশাহীন কত সাধ, ভাষাহীন কথা।
সম্মুখেতে তোমারি নয়ন জেগে আছে
আসন্ন আঁধার-মাঝে অস্তাচল-কাছে
স্থির ধ্রুবতারাসম; সেই অনিমেষ
আকর্ষণে চলেছি কোথায়, কোন্‌ দেশ
কোন্‌ নিরুদ্দেশ-মাঝে! এমনি করিয়া
চিহ্নহীন পথহীন অকূল ধরিয়া
দূর হতে দূরে ভেসে যাব— অবশেষে
দাঁড়াইব দিবসের সর্বপ্রান্তদেশে
এক মুহূর্তের তরে।– সারাদিন ভেসে
মেঘখণ্ড যথা, রজনীর তীরে এসে
দাঁড়ায় থমকি। ওগো, বারেক তখন
জীবনের খেলা রেখে করুণ নয়ন
পাঠায়ো পশ্চিম-পানে, দাঁড়ায়ো একাকী
ওই দূর তীরদেশে অনিমেষ আঁখি।
মুহূর্তে আঁধার নামি দিবে সব ঢাকি
বিদায়ের পথ; তোমার অজ্ঞাত দেশে
আমি চলে যাব; তুমি ফিরে যেয়ো হেসে
সংসারের খেলাঘরে, তোমার নবীন
দিবালোকে। অবশেষে যবে একদিন—
বহুদিন পরে— তোমার জগৎ-মাঝে
সন্ধ্যা দেখা দিবে, দীর্ঘ জীবনের কাজে
প্রমোদের কোলাহলে শ্রান্ত হবে প্রাণ,
মিলায়ে আসিবে ধীরে স্বপন-সমান
চিররৌদ্রদগ্ধ এই কঠিন সংসার,