পুনশ্চ

এই পথে ধেয়ে এসেছে কালবৈশাখীর ঝড়

               গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে

           ঘোড়সওয়ার বর্গি সৈন্যের মতো —

           কাঁপিয়ে দিয়েছে শাল-সেগুনকে,

                   নুইয়ে দিয়েছে ঝাউয়ের মাথা,

               হায়-হায় রব তুলেছে বাঁশের বনে,

           কলাবাগানে করেছে দুঃশাসনের দৌরাত্ম্য।

ক্রন্দিত আকাশের নীচে ওই ধূসর বন্ধুর

        কাঁকরের স্তূপগুলো দেখে মনে হয়েছে

           লাল সমুদ্রে তুফান উঠল,

               ছিটকে পড়ছে তার শীকরবিন্দু।

 

 

এসেছিলেম বালককালে।

        ওখানে গুহাগহ্বরে

           ঝির্‌ ঝির্‌ ঝর্নার ধারায়

        রচনা করেছি মন-গড়া রহস্যকথা,

           খেলেছি নুড়ি সাজিয়ে

               নির্জন দুপুর বেলায় আপন-মনে একলা।

 

তার পরে অনেক দিন হল,

        পাথরের উপর নির্ঝরের মতো

           আমার উপর দিয়ে

               বয়ে গেল অনেক বৎসর।

        রচনা করতে বসেছি একটা কাজের রূপ

           ওই আকাশের তলায় ভাঙামাটির ধারে,

        ছেলেবেলায় যেমন রচনা করেছি

               নুড়ির দুর্গ!

        এই শালবন, এই একলা - মেজাজের তালগাছ,

           ওই সবুজ মাঠের সঙ্গে রাঙামাটির মিতালি

        এর পানে অনেক দিন যাদের সঙ্গে দৃষ্টি মিলিয়েছি,

               যারা মন মিলিয়েছিল

        এখানকার বাদল-দিনে আর আমার বাদল-গানে,

           তারা কেউ আছে কেউ গেল চলে।