চাবি

                    বিধাতা যেদিন মোর মন
                                 করিলা সৃজন
                       বহু-কক্ষে-ভাগ-করা হর্ম্যের মতন,
                             শুধু তার বাহিরের ঘরে
               প্রস্তুত রহিল সজ্জা নানামতো অতিথির তরে;
                       নীরব নির্জন অন্তঃপুরে
         তালা তার বন্ধ করি চাবিখানি ফেলি দিলা দূরে।
                   মাঝে মাঝে পান্থ এসে দাঁড়ায়েছে দ্বারে,
         বলিয়াছে ‘খুলে দাও’— উপায় জানি না খুলিবারে।
         বাহিরে আকাশ তাই ধুলায় আকুল করে হাওয়া;
         সেখানেই যত খেলা, যত মেলা, যত আসাযাওয়া।

 

                       অন্তরের জনহীন পথে
         হিমে-ভেজা ঘাসে ঘাসে শেফালিকা লুটায় শরতে।
                      আষাঢ়ের আর্দ্রবায়ুভরে
                            কদম্বকেশরে
                      চিহ্ন তার পড়ে ঢাকা।
         চৈত্র সে বিচিত্র বর্ণে কুসুমের আলিম্পনে আঁকা।
                 সেথায় লাজুক পাখি ছায়াঘন শাখে,
         মধ্যাহ্নে করুণ কণ্ঠে উদাসীন প্রেয়সীরে ডাকে।
                     সন্ধ্যাতারা দিগন্তের কোণে
               শিরীষ পাতার ফাঁকে কান পেতে শোনে
                  যেন কার পদধ্বনি দক্ষিণ-বাতাসে।
                    ঝরাপাতা-বিছানো সে ঘাসে
         বাঁশরি বাজাই আমি কুসুমসুগন্ধি অবকাশে।

 

                      দূরে চেয়ে থাকি একা—
                 মনে করি যদি কভু পাই তার দেখা
             যে পথিক একদিন অজানা সমুদ্র উপকূলে
              কুড়ায়ে পেয়েছে চাবি, বক্ষে নিয়ে তুলে