আধুনিকা

চিঠি তব পড়িলাম, বলিবার নাই মোর,

তাপ কিছু আছে তাহে, সন্তাপ তাই মোর।

কবিগিরি ফলাবার উৎসাহ-বন্যায়

আধুনিকাদের ’পরে করিয়াছি অন্যায়

যদি সন্দেহ কর এত বড়ো অবিনয়,

চুপ ক’রে যে সহিবে সে কখনো কবি নয়।

বলিব দু-চার কথা, ভালো মনে শুনো তা ;

পূরণ করিয়া নিয়ো প্রকাশের ন্যূনতা।

পাঁজিতে যে আঁক টানে গ্রহ-নক্ষত্তর

আমি তো তদনুসারে পেরিয়েছি সত্তর।

আয়ুর তবিল মোর কুষ্ঠির হিসাবে

অতি অল্প দিনেই শূন্যেতে মিশাবে।

চলিতে চলিতে পথে আজকাল হর্‌দম

বুকে লাগে যমরথচক্রের কর্দম।

তবু মোর নাম আজো পারিবে না ওঠাতে

প্রাত্নিক তত্ত্বের গবেষণা-কোঠাতে।

জীর্ণ জীবনে আজ রঙ নাই, মধু নাই —

মনে রেখো, তবু আমি জন্মেছি অধুনাই।

সাড়ে আঠারো শতক এ. ডি., সে যে বি. সি. নয় ;

মোর যারা মেয়ে-বোন নারদের পিসি নয়।

আধুনিকা যারে বল তারে আমি চিনি যে,

কবিযশে তারি কাছে বারো-আনা ঋণী যে।

তারি হাতে চিরদিন যৎপরোনাস্তি

পেয়েছি পুরস্কার, পেয়েছিও শাস্তি।

প্রমাণ গিয়েছি রেখে, এ-কালিনী রমণীর

রমণীয় তালে বাঁধা ছন্দ এ ধমনীর।

কাছে পাই হারাই-বা তবু তারি স্মৃতিতে

সুরসৌরভ জাগে আজো মোর গীতিতে।

মনোলোকে দূতী যারা মাধুরীনিকুঞ্জে

গুঞ্জন করিয়াছি তাহাদেরি গুণ যে।