পুনশ্চ

      ধোবাদের গাধাটা আছে কাজের গরজে —

             ছেলেটার নেই কোনো দরকার,

      তাই জন্তুটা তার চার পা নিয়ে সমস্তটা তারই,

             যাই বলুন-না জজসাহেব।

      বাপ মা চায় পড়ে শুনে হবে সে সদর-আলা;

সর্দার পোড়ো ওকে টেনে নামায় গাধার থেকে,

         হেঁচড়ে আনে বাঁশবন দিয়ে,

             হাজির করে পাঠশালায়।

মাঠে ঘাটে হাটে বাটে জলে স্থলে তার স্বরাজ —

         হঠাৎ দেহটাকে ঘিরলে চার দেয়ালে,

             মনটাকে আঠা দিয়ে এঁটে দিলে

                 পুঁথির পাতার গায়ে।

 

আমিও ছিলেম একদিন ছেলেমানুষ।

         আমার জন্যেও বিধাতা রেখেছিলেন গড়ে

             অকর্মণ্যের অপ্রয়োজনের জল স্থল আকাশ।

তবু ছেলেদের সেই মস্ত বড়ো জগতে

         মিলল না আমার জায়গা।

আমার বাসা অনেক কালের পুরোনো বাড়ির

              কোণের ঘরে—

                 বাইরে যাওয়া মানা।

  সেখানে চাকর পান সাজে, দেয়ালে মোছে হাত,

             গুন গুন ক'রে গায় মধুকানের গান;

    শান-বাঁধানো মেজে, খড়্‌খড়ে-দেওয়া জানলা।

নীচে ঘাট-বাঁধানো পুকুর, পাঁচিল ঘেঁষে নারকেল গাছ।

    জটাধারী বুড়ো বট মোটা মোটা শিকড়ে

               আঁকড়ে ধরেছে পুব ধারটা।

        সকাল থেকে নাইতে আসে পাড়ার লোকে,

           বিকেলের পড়ন্ত রোদে ঝিকিমিকি জলে

               ভেসে বেড়ায় পাতিহাঁসগুলো,

                   পাখা সাফ করে ঠোঁট দিয়ে মেজে।