পুনশ্চ

       অমাবস্যা পার হয়ে শুক্লপক্ষ এল আবার।

অন্ধমাধব আঙুলের স্পর্শ দিয়ে পাথরের সঙ্গে কথা কয়,

           পাথর তার সাড়া দিতে থাকে।

        কাছে দাঁড়িয়ে থাকে প্রহরী।

           পাছে মাধব চোখের বাঁধন খোলে।

পণ্ডিত এসে বললে, ‘একাদশীর রাত্রে প্রথম পূজার শুভক্ষণ।

        কাজ কি শেষ হবে তার পূর্বে। '

মাধব প্রণাম করে বললে, ‘আমি কে যে উত্তর দেব।

    কৃপা যখন হবে সংবাদ পাঠাব যথাসময়ে,

        তার আগে এলে ব্যাঘাত হবে, বিলম্ব ঘটবে। '

 

ষষ্ঠী গেল, সপ্তমী পেরোল —

        মন্দিরের দ্বার দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ে

                    মাধবের শুক্লকেশে।

    সূর্য অস্ত গেল। পাণ্ডুর আকাশে একাদশীর চাঁদ।

মাধব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে,

           ‘যাও প্রহরী, সংবাদ দিয়ে এসো গে

               মাধবের কাজ শেষ হল আজ।

                   লগ্ন যেন বয়ে না যায়। '

        প্রহরী গেল।

মাধব খুলে ফেললে চোখের বন্ধন।

        মুক্ত দ্বার দিয়ে পড়েছে একাদশী-চাঁদের পূর্ণ আলো

                   দেবমূর্তির উপরে।

        মাধব হাঁটু গেড়ে বসল দুই হাত জোড় করে,

               একদৃষ্টে চেয়ে রইল দেবতার মুখে,

                       দুই চোখে বইল জলের ধারা।

আজ হাজার বছরের ক্ষুধিত দেখা দেবতার সঙ্গে ভক্তের।

 

  রাজা প্রবেশ করলেন মন্দিরে।

    তখন মাধবের মাথা নত বেদীমূলে।

        রাজার তলোয়ারে মুহূর্তে ছিন্ন হল সেই মাথা।

           দেবতার পায়ে এই প্রথম পূজা, এই শেষ প্রণাম।