সেঁজুতি

নানা দিকে নানা পথে, আজ তার অর্থ গেল কমে

ছুটির গোধূলিবেলা তন্দ্রালু আলোকে। তাই ক্রমে

ফিরায়ে নিতেছ শক্তি, হে কৃপণা, চক্ষুকর্ণ থেকে

আড়াল করিছ স্বচ্ছ আলো ; দিনে দিনে টানিছে কে

নিষ্প্রভ নেপথ্যপানে। আমাতে তোমার প্রায়োজন

শিথিল হয়েছে, তাই মূল্য মোর করিছ হরণ,

দিতেছ ললাটপটে বর্জনের ছাপ। কিন্তু জানি,

তোমার অবজ্ঞা মোরে পারে না ফেলিতে দূরে টানি।

তব প্রয়োজন হতে অতিরিক্ত যে মানুষ তারে

দিতে হবে চরম সম্মান তব শেষ নমস্কারে।

যদি মোরে পঙ্গু কর, যদি মোরে কর অন্ধপ্রায়,

যদি বা প্রচ্ছন্ন কর নিঃশক্তির প্রদোষচ্ছায়ায়,

বাঁধ বার্ধক্যের জালে, তবু ভাঙা মন্দিরবেদীতে

প্রতিমা অক্ষুণ্ন রবে সগৌরবে ; তারে কেড়ে নিতে

শক্তি নাই তব।

 

                    ভাঙো ভাঙো, উচ্চ করো ভগ্নস্তূপ,

জীর্ণতার অন্তরালে জানি মোর আনন্দস্বরূপ

রয়েছে উজ্জ্বল হয়ে। সুধা তারে দিয়েছিল আনি

প্রতিদিন চতুর্দিকে রসপূর্ণ আকাশের বাণী ;

প্রত্যুত্তরে নানা ছন্দে গেয়েছে সে ‘ ভালোবাসিয়াছি '।

সেই ভালোবাসা মোরে তুলেছে স্বর্গের কাছাকাছি

ছাড়ায়ে তোমার অধিকার। আমার সে ভালোবাসা

সব ক্ষয়ক্ষতিশেষে অবশিষ্ট রবে ; তার ভাষা

হয়তো হারাবে দীপ্তি অভ্যাসের ম্লানস্পর্শ লেগে,

তবু সে অমৃতরূপ সঙ্গে রবে যদি উঠি জেগে

মৃত্যুপরপারে। তারি অঙ্গে এঁকেছিল পত্রলিখা

আম্রমঞ্জরীর রেণু, এঁকেছে পেলব শেফালিকা

সুগন্ধি শিশিরকণিকায় ; তারি সূক্ষ্ম উত্তরীতে

গেঁথেছিল শিল্পকারু প্রভাতের দোয়েলের গীতে

চকিত কাকলিসূত্রে ; প্রিয়ার বিহ্বল স্পর্শখানি

সৃষ্টি করিয়াছে তার সর্বদেহে রোমাঞ্চিত বাণী,