জন্মদিন

আজ মম জন্মদিন। সদ্যই প্রাণের প্রান্তপথে

ডুব দিয়ে উঠেছে সে বিলুপ্তির অন্ধকার হতে

মরণের ছাড়পত্র নিয়ে। মনে হতেছে কী জানি

পুরাতন বৎসরের গ্রন্থি বাঁধা জীর্ণ মালাখানি

সেথা গেছে ছিন্ন হয়ে ; নবসূত্রে পড়ে আজি গাঁথা

নব জন্মদিন। জন্মোৎসবে এই-যে আসন পাতা

হেথা আমি যাত্রী শুধু, অপেক্ষা করিব, লব টিকা

মৃত্যুর দক্ষিণ হস্ত হতে, নূতন অরুণলিখা

যবে দিবে যাত্রার ইঙ্গিত।

 

                     আজ আসিয়াছে কাছে

জন্মদিন মৃত্যুদিন, একাসনে দোঁহে বসিয়াছে,

দুই আলো মুখোমুখি মিলিছে জীবনপ্রান্তে মম

রজনীর চন্দ্র আর প্রত্যুষের শুকতারাসম —

এক মন্ত্রে দোঁহে অভ্যর্থনা।

 

                    প্রাচীন অতীত, তুমি

নামাও তোমার অর্ঘ্য ; অরূপ প্রাণের জন্মভূমি,

উদয়শিখরে তার দেখো আদিজ্যোতি। করো মোরে

আশীর্বাদ, মিলাইয়া যাক তৃষাতপ্ত দিগন্তরে

মায়াবিনী মরীচিকা। ভরেছিনু আসক্তির ডালি

কাঙালের মতো ; অশুচি সঞ্চয়পাত্র করো খালি,

ভিক্ষামুষ্টি ধূলায় ফিরায়ে লও, যাত্রাতরী বেয়ে

পিছু ফিরে আর্ত চক্ষে যেন নাহি দেখি চেয়ে চেয়ে

জীবনভোজের শেষ উচ্ছিষ্টের পানে।

 

                                        হে বসুধা,

নিত্য নিত্য বুঝায়ে দিতেছ মোরে — যে তৃষ্ণা, যে ক্ষুধা

তোমার সংসাররথে সহস্রের সাথে বাঁধি মোরে

টানায়েছে রাত্রিদিন স্থূল সূক্ষ্ম নানাবিধ ডোরে