মাকাল
  গৌরবর্ণ নধর দেহ, নাম শ্রীযুক্ত রাখাল,
  জন্ম তাহার হয়েছিল, সেই যে-বছর আকাল।
       গুরুমশায় বলেন তারে,
       “ বুদ্ধি যে নেই একেবারে;
  দ্বিতীয়ভাগ করতে সারা ছ ' মাস ধরে নাকাল। ”
  রেগেমেগে বলেন, “ বাঁদর, নাম দিনু তোর মাকাল। ”
 
  নামটা শুনে ভাবলে প্রথম বাঁকিয়ে যুগল ভুরু ;
  তারপর সে বাড়ি এসে নৃত্য করলে শুরু।
         হঠাৎ ছেলের মাতন দেখি
         সবাই তাকে শুধায়, এ কী!
  সকলকে সে জানিয়ে দিল, নাম দিয়েছেন গুরু —
  নতুন নামের উৎসাহে তার বক্ষ দুরুদুরু।
 
  কোলের ‘ পরে বসিয়ে দাদা বললে কানে-কানে,
  “ গুরুমশায় গাল দিয়েছেন, বুঝিসনে তার মানে! ”
         রাখাল বলে, “ কখ্‌খোনো না,
         মা যে আমায় বলেন সোনা,
  সেটা তো গাল নয় সে কথা পাড়ার সবাই জানে।
  আচ্ছা, তোমায় দেখিয়ে দেব, চলো তো ঐখানে। ”
 
  টেনে নিয়ে গেল তাকে পুকুরপাড়ের কাছে,
  বেড়ার ‘ পরে লতায় যেথা মাকাল ফ ' লে আছে।
         বললে, “ দাদা সত্যি বোলো,
         সোনার চেয়ে মন্দ হল?
  তুমি শেষে বলতে কি চাও, গাল ফলেছে গাছে। ”
  “ মাকাল আমি ” ব ' লে রাখাল দু হাত তুলে নাচে।
 
  দোয়াত কলম নিয়ে ছোটে, খেলতে নাহি চায়,
  লেখাপড়ায় মন দেখে মা অবাক হয়ে যায়।