পুনশ্চ

               স্রস্ত তার বেণী, ত্রস্ত তার বক্ষ।

বীণার গুঞ্জরণ আকাশে মেলে দেয় এক অন্তহীন অভিসারের পথ।

           রাগিণী-বিছানো সেই শূন্যপথে বেরিয়ে পড়ে তার মন।

        কার দিকে। দেখার আগে যাকে চিনেছিল তারই দিকে।

 

একদিন নিমফুলের গন্ধ অন্ধকার ঘরে অনির্বচনীয়ের আমন্ত্রণ নিয়ে এসেছে।

    মহিষী বিছানা ছেড়ে বাতায়নের কাছে এসে দাঁড়ালো।

        নীচে সেই ছায়ামূর্তির নৃত্য, বিরহের সেই উর্মি - দোলা।

           মহিষীর সমস্ত দেহ কম্পিত।

        ঝিল্লিঝংকৃত রাত, কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ দিগন্তে।

    অস্পষ্ট আলোয় অরণ্য স্বপ্নে কথা কইছে।

সেই বোবা বনের ভাষাহীন বাণী লাগল রাজমহিষীর অঙ্গে অঙ্গে।

        কখন নাচ আরম্ভ হল সে জানে না।

           এ নাচ কোন্‌ জন্মান্তরের, কোন্‌ লোকান্তরের।

 

               গেল আরো দুই রাত।

অভিসারের পথ একান্তই শেষ হয়ে আসছে এই জানলারই কাছে।

           সেদিন বীণায় পরজের বিহ্বল মিড়।

    কমলিকা আপন মনে নীরবে বলছে,

           ‘ ওগো কাতর, ওগো হতাশ, আর ডেকো না।

               আমার আর দেরি নেই। '

           কিন্তু যাবে কার কাছে।

        চোখে না দেখেছিল যাকে তারই কাছে তো?

               কেমন করে হবে।

দেখা - মানুষ আজ না - দেখা মানুষকে ছিনিয়ে নিয়ে

        পাঠিয়ে দিলে সাত - সমুদ্র - পারে রূপকথার দেশে।

               সেখানকার পথ কোন্‌ দিকে।

 

                   আরো এক রাত যায়।

           কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ডুবেছে অমাবস্যার তলায়।

                   আঁধারের ডাক কী গভীর।

    পথ - না - জানা যত - সব গুহা - গহ্বর মনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন,

        এই ডাক সেখানে গিয়ে প্রতিধ্বনি জাগায়।

সেই অস্ফুট আকাশবাণীর সঙ্গে মিলে ওই যে বাজে বীণায় কানাড়া।