সৌন্দর্য্য ও প্রেম

মাথা তুলে চেয়ে দেখে সুনীল বিমানে

অমর আলোকময় তপনের পানে;

ছোট মাথা দুলাইয়া কহে ফুল গাছে,

“লাবণ্য-কিরণ-ছটা আমারো ত আছে!”

“লক্ষান্তরেহর্কশ্চ জলেষু পদ্মঃ” ইহাদের মধ্যেও ঐক্য!


সুন্দর সুন্দর করে

সুন্দর আপনি সুন্দর এবং অন্যকে সুন্দর করে। কারণ, সৌন্দর্য্য হৃদয়ে প্রেম জাগ্রত করিয়া দেয় এবং প্রেমই মানুষকে সুন্দর করিয়া তুলে। শারীরিক সৌন্দর্য্যও প্রেমে যেমন দীপ্তি পায় এমন আর কিছুতে না। মানুষের মিলনে যেমন প্রেম আছে, পশুদের মিলনে তেমন প্রেম নাই, এই জন্য বোধ করি, পশুদের অপেক্ষা মানুষের সৌন্দর্য্য পরিস্ফুটতর। যে মানুষ ও যে জাতি পাশব, নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন, সে মানুষের ও সে জাতির মুখশ্রী সুন্দর হইতে পারে না। দেখা যাইতেছে, দয়ায় সুন্দর করে, প্রেমে সুন্দর করে, হিংসায় নিষ্ঠুরতায় সৌন্দর্য্যের ব্যাঘাত জন্মায়। জগতের অনুকূলতাচরণ করিলে সুন্দর হইয়া উঠি ও প্রতিকূলতা করিলে জগৎ আমাদের গালে কদর্য্যতার চুনকালি মাখাইয়া তাহার রাজপথে ছাড়িয়া দেয়, আমাদিগকে কেহ সমাদর করিয়া আশ্রয় দেয় না।


শাস্তি

এ শাস্তি বড় সামান্য নয়। আমাদের নিজের মধ্যে সৌন্দর্য্যের ন্যূনতা থাকিলে, আমরা জগতের সৌন্দর্য্য-রাজ্যে প্রবেশাধিকার পাই না, ধরণীর ধুলা-কাদার মধ্যে লুটাইতে থাকি। শব্দ শুনি, গান শুনি না; চলাফিরা দেখিতে পাই, নৃত্য দেখিতে পাই না; আহার করিয়া পেট ভরাই, কিন্তু সুস্বাদ কাহাকে বলে জানি না। জগতের যে অংশে কারাগার সেইখানে গর্ত্ত খুঁড়িয়া অত্যন্ত নিরাপদে বৈষয়িক কেঁচো হইয়া বুড়া বয়স পর্য্যন্ত কাটাইয়া দিই, মৃত্তিকার তলবাসী চক্ষুবিহীন কৃমিদের সহিত কুটুম্বিতা করি, ও তাহাদের সহিত জড়িত বিজড়িত হইয়া স্তূপাকারে নিদ্রা দিই।


উদ্ধার

এই কৃমিরাজ্য হইতে উদ্ধার পাইয়া আমরা সূর্য্যালোকে আসিতে চাই। কে আনিবে? সৌন্দর্য্য স্বয়ং। কারণ, অশরীরী প্রেম সৌন্দর্য্যে শরীর ধারণ করিয়াছে। প্রেম যেখানে ভাব, সৌন্দর্য্য সেখানে তাহার অক্ষর; প্রেম যেখানে হৃদয়, সৌন্দর্য্য সেখানে গান; প্রেম যেখানে প্রাণ, সৌন্দর্য্য সেখানে শরীর; এই জন্য সৌন্দর্য্যে প্রেম জাগায় এবং প্রেমে সৌন্দর্য্য জাগাইয়া তুলে।