নিন্দা-তত্ত্ব
কিন্তু আমি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করি এ কথা বিনয়ের কথা নয়। দারিদ্র্য দোষের নয়, কিন্তু পরমুখাপেক্ষী হয়ে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করবার রুচি মনের একটা বিকৃত অবস্থা। কেউ কখনো আমি মিথ্যাবাদী বা আমি জুয়াচোর বলে বিনয় প্রকাশ করে না।

আত্ম-নিন্দার ছলে অনেক সময়ে আমরা আত্ম-প্রশংসা করি। একজন নানা প্রকার ভূমিকা করে বললেন যে, 'দেখুন মহাশয়, আমার একটা ভারি দোষ আছে, আমি তা কোনো মতেই ছাড়াতে পারি নে, আমার যা মনে আসে আমি তা স্পষ্ট না বলে থাকতে পারি নে, আমি যা বলি তা মুখের সামনে বলি।' একে বিনীতভাবে অহংকার করা বলে।

আমরা আর-এক সময়ে আত্ম-নিন্দা করি। আমরা যখন মনে মনে জানি আমাদের একটা গুণ আছে, আমরা তখন কখনো কখনো আমাদের সেই গুণ নেই বলে বাইরে প্রকাশ করি; তার তাৎপর্য এই যে শ্রোতা আমার কথার বিরুদ্ধে নিজের মত ব্যক্ত করুক, সেইটে আমাদের শোনবার ইচ্ছে। আমরা এক- একজনকে দেখেছি, তাঁরা বন্ধুমণ্ডলীতে 'লোকটা তো বড়ো খোলাখালা!' এই প্রশংসাটুকু পাবার জন্য আপনার কতকগুলি ছোটোখাটো দোষের কথা হাসতে হাসতে উল্লেখ করেন, তাঁর নিন্দার মূল্যে প্রশংসা ক্রয় করতে চান।

এইরকম যত আত্ম-নিন্দা দেখা যায় প্রায় দেখবে যে, বিনয়ের জমি থেকে তার চারা ওঠে নি। গর্বই তার মূল। পরনিন্দার মূলেও গর্ব, আত্ম-নিন্দার মূলেও গর্ব। পরনিন্দাও যেমন দোষ, আত্ম-নিন্দাও তেমনি। পরহত্যা ও আত্মহত্যার মধ্যে নীতিশাস্ত্রে যেমন কম তফাত লেখে, পরনিন্দা ও আত্ম-নিন্দার মধ্যেও তাই।