ন্যাশনল ফন্ড
'ন্যাশনল' শব্দটার ব্যবহার অত্যন্ত প্রচলিত হইয়াছে। ন্যাশনল থিয়েটর, ন্যাশনল মেলা, ন্যাশনল পেপর ইত্যাদি। এমন কোনোপ্রকার অনুষ্ঠান দেখিতে পাই না, যাহার প্রতি ন্যাশনল শব্দের প্রয়োগ রীতিবিরুদ্ধ হয়। আমি জিজ্ঞাসা করি ন্যাশনল কসাইখানা করিলে কেমন হয়! সেখানে ন্যাশনল গোরু জবাই করিয়া ন্যাশনল হোটেলে ন্যাশনল বীফস্টেকের আয়োজন করা যাইতে পারে। কারণ, এখন একদল আর্য উঠিয়াছেন, তাঁহারা বিলাতি ছাড়া কিছুই ব্যবহার করেন না, কিন্তু ন্যাশনল শব্দের গণ্ডূষ করিয়া তাহাকে শোধন করিয়া লন।

ক্রমেই ন্যাশনলের দল-পুষ্টি হইতেছে। সম্প্রতি ন্যাশনল ফন্ড নামে আর-একটা কথা শুনা যাইতেছে। যখনই কোনো অনুষ্ঠানকে আগেভাগে জোর করিয়া ন্যাশনল বলা হয় তখনই মনের ভিতর কেমন সন্দেহ হয় বুঝি এ জিনিসটা ঠিক ন্যাশনল নয়, তাই ইহাকে এত করিয়া ন্যাশনল বলা হইতেছে। দুর্গাপূজাকে কেহ যদি বলে ন্যাশনল দুর্গাপূজা, তাহা হইলেই ভয় হয় ইহার কিছু গোলযোগ আছে। এই ফন্ডের সম্বন্ধেও আমাদের সেইরূপ একটা সন্দেহ হইয়াছে।

ন্যাশনল বলিতে আমি তো এই বুঝি, সমস্ত নেশন যাহা করিতেছে, সমস্ত নেশনের ভিতর হইতে যাহা স্বতঃ উদ্ভিন্ন হইয়া বিকশিত হইয়া উঠিয়াছে, যাহা না হইয়া থাকিতে পারে না, যাহাকে জোর করিয়া ন্যাশনল বলিবার আবশ্যক হয় না; কারণ তাহা ন্যাশনল নয় বলিয়া কাহারও মুহূর্তের জন্য সন্দেহও হয় না। আমরা অকারণে বড়ো বড়ো কথা ব্যবহার ভালো বলি না, কারণ, তাহা হইলে ক্রমে সে কথাগুলির প্রতি লোকের অবিশ্বাস জন্মিয়া যায় ও তাহাদের দ্বারা ভবিষ্যতে আর কোনো ভালো কাজ হয় না। যাহা হউক, আলোচ্য প্রস্তাবটি ন্যাশনল কি না তাহা স্থির করা আবশ্যক।

শুনা যাইতেছে একমাত্র Political agitationই ওই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য। ওই শব্দটার বাংলা কী ঠিক জানি না, কেহ কেহ বলেন রাজনৈতিক আন্দোলন, আমরাও তাহাই গ্রহণ করিলাম।

প্রথমত, Political agitation জিনিসটাই ন্যাশনল নয়। ইহা কেহই অস্বীকার করিবে না, ও কথাটা বোঝে খুব কম লোক, আবার যে দু-চার জন লোক বোঝে তাহাদের মধ্যে সকলের ও কাজটার প্রতি বিশেষ অনুরাগ নাই, কথাটার মানে জানে এই পর্যন্ত।

দ্বিতীয়ত, এই কাজটার ভার কাহাদের উপরে এবং তাঁহারা কী উপায়ে ইহা সাধন করিতেছেন? যাঁহারা বাংলা ভাষা অবহেলা করেন, বাংলা ভাষা জানেন না, ইংরাজি ভাষায় বাগিমতা প্রদর্শন করাই যাঁহাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য, তাঁহারাই ইহার প্রধান। গোড়াতে ইহার নামই হইয়াছে National Fund, ইংরাজিতেই ইহার উদ্দেশ্য প্রচার হইয়াছে, আজ পর্যন্ত ইংরাজিতেই ইহার কাণ্ডকারখানা চলিতেছে। অথচ মুখে বলা হইতেছে, peopleরাই আমাদের সহায়, সনষসরনদের জন্যই আমরা এতটা করিতেছি, peopleদের উপরেই আমাদের ভরসা। এ-সব ভান করিবার দরকার কী? peopleরা যে তোমাদের কথাই বুঝিতে পারে না। ইংরাজি ভাষায় তোমাদের তর্জন গর্জন শুনিয়া সে বেচারিরা যে হাঁ করিয়া তাকাইয়া থাকে! তোমরা যদি তাহাদের ভালোবাসিতে, তবে তাহাদের ভাষা শিখিতে; বিলাতি হৃদয় কী করিয়া উত্তেজিত করিতে হয় তাহাই তোমরা একরত্তি বয়স হইতে অভ্যাস করিয়া আসিতেছ, যাহারা হাততালি দিতে জানে না, যাহারা রেজোলিউশন মুব্‌ করে না, সেকেন্ড করে না, যাহারা constitutional history পড়ে নাই তাহাদের হৃদয়ের সুখদুঃখ কোন্‌খানে, কোন্‌খানে ঘা পড়িলে তাহাদের প্রাণ কাঁপিয়া উঠে তাহা কি তোমরা জান, না, জানিতে কেয়ার কর? শুনিয়াছি বটে, মাঝে মাঝে তোমরা মিটিং ডাকিয়া একজন ইংরাজিতে বক্তৃতা দাও, আর-একজন সেইটেকে বাংলায় ব্যাখ্যা করেন, ইহা অপেক্ষা হাস্যজনক ও দুঃখজনক ব্যাপার কি কিছু আছে? যখন বাঙালির কাছে বাঙালিতে