বঙ্গে সমাজ-বিপ্লব
আবার তখনকার নব্য বংশ সমাজের আগাগোড়া ভাঙিবার জন্য গদা উদ্যত করেন। এইরূপে রক্ষণশীল ও সংস্কারশীল চিরকালই সমাজে জাগ্রত থাকে, না থাকিলে সমাজের দারুণ অনিষ্ট হয়। যখন ভারতবর্ষে উন্নতির মধ্যাহ্নকাল তখন ধীরে ধীরে কতকগুলি নূতন দর্শন ও নূতন দল নির্মিত হইতে লাগিল এবং তাহাদের প্রভাবে বৌদ্ধধর্ম উত্থিত হইয়া সমাজে একটি ঘোরতর বিপ্লব বাধাইয়া দিল। পৌরাণিক ঋষিরা ভুল বুঝিলেন, তাঁহারা মনে করিলেন এরূপ বিপ্লব অনিষ্টজনক। অমনি পুরাণে, সংহিতায় ও অন্যান্য নানাপ্রকার সমাজের হস্তপদ অষ্টপৃষ্ঠে বন্ধন করিয়া ফেলিলেন এবং ভবিষ্যতে এরূপ বিপ্লব না বাধে তাহার নানা উপায় করিয়া রাখিলেন। সমাজের স্বাস্থ্য নষ্ট হইল এবং সমাজ ক্রমশই অবনতির অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িল। সংস্কারশীলতার অভাবে ও রক্ষণশীলতার বাড়াবাড়িতেই হিন্দুসমাজ নির্জীব হইয়া পড়িল।

বঙ্গদেশের এই সামাজিক বিপ্লব আমাদের তো শুভ লক্ষণ বলিয়া মনে হয়; যে উপায়েই হউক, এই যে বহুকাল-ব্যাপী নিরুদ্যমের ঘুম ভাঙিয়াছে এবং শিক্ষিত লোকেরা নবউদ্যমে কার্য করিবার ক্ষেত্রে অন্বেষণ করিতেছেন ইহা তো মঙ্গলেরই চিহ্ন। যেমন যুদ্ধ-বিপ্লবের অনুষ্ঠানে জাতির শারীরিক বল বর্ধিত হয়, সেইরূপ মানসিক বিপ্লবে মনের বল বাড়িবার কথা। আর আধিক দিন নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকিলে সমস্ত বাঙালি জাতি নির্জীব হইয়া পড়িত। এখন যেরূপ ভাঙাগড়া ও চারি দিক হইতে উপাদান সংগ্রহ আরম্ভ হইয়াছে, ইহাতে বোধ হয়, অল্প-দিনের মধ্যে এই বাংলার সমাজ নূতন দৃঢ়তর ভিত্তিতে স্থাপিত হইবে।