কবিতা-পুস্তক
পুরাণের সহিত বাল্যক্রীড়া করা আমাদের মতে যুক্তি-সংগত নহে।

পঞ্চম—‘আদর’—এ কবিতাটি মন্দ নহে—ইহার প্রথম কথাগুলিই অতি সুন্দর হইয়াছে—

‘মরুভূমিমাঝে যেন, একই কুসুম,

পূর্ণিত সুবাসে।

বরষার রাত্রে যেন, একই নক্ষত্র,

আঁধার আকাশে॥

নিদাঘ সন্তাপে যেন একই সরসী,

বিশাল প্রান্তরে।

রতন শোভিত যেন, একই তরণী,

অনন্ত সাগরে।

তেমনি আমার তুমি প্রিয়ে, সংসার-ভিতরে॥

কিন্তু গ্রন্থকার কিছু বাড়াবাড়ি করিতে গিয়া হাস্যস্পদ হইয়া পড়িয়াছেন—তিনি আরও বলিতেছেন—

সুশীতল ছায়া তুমি, নিদাঘ সন্তাপে,

রম্য বৃক্ষতলে।

শীতের আগুন তুমি, তুমি মোর ছত্র,

বরষার জলে॥

এই কথাগুলি পড়িয়া বাউলদের একটি পুরানো গান আমাদের মনে পড়িল—

  ‘গৌর আমার নাকের নথ, কন্ঠের কন্ঠমাল

  গৌর আমার কানের দুল, হাতের বাজু বালা

                          গো-উ-র হ-রি।

ষষ্ঠ—‘বায়ু’—এই কবিতাটি একটি প্রহেলিকা স্বরূপ। ইহার শীর্ষে ‘বায়ু’ শব্দটি না থাকিলে ইহা একটি সুন্দর হেঁয়ালি হইতে পারিত। বায়ু বলিতেছে—

‘ আমিই রাগিণী, আমি ছয় রাগ,

কামিনীর মুখে আমিই সোহাগ,

বালকের বাণী অমৃতের ভাগ,

                                          মম রূপান্তর '॥

‘কামিনী সোহাগ’ বা ‘বালকের বাণী’ যে বায়ুরই রূপান্তর তাহা একজন কবি অপেক্ষা একজন বৈজ্ঞানিক বুঝাইয়া দিলে ভালো হইত। এইজন্যই কবি ক্যাম্পবেল বলিয়াছেন যে ‘কঠোর বিজ্ঞানশাস্ত্র আসিয়া প্রকৃতির মুখ হইতে মোহিনী অবগুন্ঠন তুলিয়া লয় এবং সকল বস্তুকেই পাঞ্চভৌতিক নিয়মের অধীন করিতে চাহে’।

—আমরা বিজ্ঞানের অবমাননা করিতে চাহি না—কিন্তু কবির কল্পনা হইতে বিজ্ঞানের তন্ন তন্ন স্বাতন্ত্র রাখা উচিত। কিন্তু বায়ুর আরও বক্তব্য আছে—সে বলিতেছে—