সে

প্ল্যানটা কী শুনি।

বলব, চার লাইনে আমার চরিত্র বর্ণনা করো, স্তবে আমাকে খুশি করে দাও। মিল হওয়া চাই ফর্স্ট্‌ ক্লাস।

কনে দেখার যদি পেটেণ্ট্‌ নেওয়া চলত তুমি নিতে পারতে! বরের স্তব দিয়ে শুরু! অতি উত্তম। উমা তাতেই জিতেছিলেন।

প্রথম লাইনটা ওকে ধরিয়ে দিতে হবে, নইলে আমার চরিত্রের থই পাবে না ; আমার বর্ণনার ধুয়োটি হচ্ছে এই —

তুমি দেখি মানুষটা একেবারে অদ্ভুত।

পুরো বহরের মিল দাবি করলে মেয়েটি বোধ হয় মাথায় হাত দিয়ে পড়বে। ওকে হার মানতেই হবে। আচ্ছা দাদা, তুমিই দাও দেখি ওর পরের লাইনটা যোগ করে।

আমি বললেম —

স্কন্ধে তোমার বুঝি চাপিয়াছে বদভূত।

এক্‌‍সেলেণ্ট্। কিন্তু আর দুটো লাইন না হলে শ্লোক তো ভর্তি হয় না। আমি বলছি, কনে তো কনে, কনের বাবার সাধ্যি হবে না ওর মিল বের করতে। দাদা, তোমার মাথায় কিছু আসছে? ভাষায় হোক্‌ অভাষায় হোক।

একেবারেই না।

তা হলে শোনো —

ছাত থেকে লাফ দাও, পাঁক দেখে ঝাঁপ দাও,

যখন তখন করো যদ্ভূত তদ্ভূত।

ও আবার কী! ওটা কোন্‌ দিশি বুলি।

দেবভাষা সংস্কৃত, কিম্ভূত শব্দের এক পর্যায়।

যদ্ভূত তদ্ভূত, মানেটা কী হল।

ওর মানে, যা খুশি তাই। ওটা বঙ্গভাষায়, যাকে হাল আমলের পণ্ডিতেরা বলেছে ‘অবদান'।

লোকটার 'পরে আমার ভক্তি কূল ছাপিয়ে উঠল। মনে হল অসাধারণ প্রতিভা। ওর পিঠ থাবড়িয়ে বললুম, স্তম্ভিত করেছ আমাকে।

সে বললে, স্তম্ভিত হলে চলবে কেন। চলতে হবে। লগ্ন বয়ে যাচ্ছে। ফস্‌ করে ববকরণ পেরিয়ে যাবে কখন, এসে পড়বে তৈতিলকরণ, বৈষ্কুম্ভযোগ, তার পরেই হর্ষণযোগ, বিষ্টিকরণ, শেষ রাত্তিরে অসৃকযোগ, ধনিষ্ঠানক্ষত্র — গোস্বামীমতে ব্যতীপাতযোগ বালবকরণ, পরিঘযোগে যখন গরকরণ এসে পড়বে তখন বিপদ হবে — ঘরকর‌্‍নার পক্ষে গরকরণের মতো এত বড়ো বাধা আর নেই। সিদ্ধিযোগ ব্রহ্মযোগ ইন্দ্রযোগ শিবযোগ এই হপ্তার মধ্যে একদিনও পাওয়া যাবে না, বরীয়ানযোগের অল্প একটু আশা আছে যখন পুনর্বসু নক্ষত্রের দৃষ্টি পড়বে।

কাজ নেই, কাজ নেই, এখ্‌খনি বেরিয়ে পড়া যাক। ডাক দাও পুত্তুলালকে, মোটরখানা আনুক। সে এতক্ষণে চরকা কাটতে বসেছে। চরকা কাটতে কাটতে তবে সে ঘুমতে পারে, মোটর চালিয়ে চালিয়ে তার এই দশা হয়েছে।

গাড়িতে চড়ে বসলুম।

জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলেছি, ঘোর অন্ধকার। পুকুরের ধারে আস্‌‍সেওড়ার ঝোপ। হঠাৎ তার ভিতর থেকে খেঁকশিয়ালি উঠল ডেকে। তখন রাত সাড়ে তিনটে হবে। যেমনি ডাকা, পুত্তুলাল চমকে উঠে গাড়িসুদ্ধ গিয়ে পড়ল একগলা জলের মধ্যে। এ দিকে তার পিঠের কাপড়ের ভিতরে একটা ব্যাঙ ঢুকে লাফালাফি করছে। আর, পুত্তুলালের সে কী চেঁচানি! আমি ওকে সান্ত্বনা