প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
গাড়ির ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ডাক দিতে লাগলুম, বনমালী, বনমালী।
ইস্টুপিডের কোনো সাড়াশব্দ নেই। স্পষ্টই বোঝা গেল, সে তখন বোলপুর স্টেশনের প্ল্যাট্ফরমে চাদর মুড়ি দিয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমচ্ছে। ভারি রাগ হল। ইচ্ছে করল, তার নাকের মধ্যে ফাউণ্টেন পেনের সুড়্সুড়ি দিয়ে তাকে হাঁচিয়ে দিয়ে আসি গে। এ দিকে পাঁকের জলে আমার চুলগুলো গেছে ভিজে। না আঁচড়ে নিয়ে ওর বউদিদির ওখানে যাই কী করে। গোলমাল শুনে পুকুরপাড়ে হাঁসগুলো প্যাঁক প্যাঁক করে ডেকে উঠেছে। এক লাফ দিয়ে পড়লুম তাদের মধ্যে ; একটাকে চেপে ধরে তার ডানা দিয়ে ঘষে ঘষে একরকম ঠিক করে নিলুম। পুত্তুলাল বললে, ঠিক বলেছ, দাদাবাবু। ব্যাঙের লাফে বড়ো আরাম বোধ হচ্ছে। ঘুম আসছে।
যাওয়া গেল ওর বউদিদির বাড়িতে। খিদের চোটে একেবারে ভুলে গেছি কনে দেখার কথা।
বউদিদিকে জিগেস করলেম, আমার সঙ্গে ছিল সে, তাকে দেখছি নে কেন।
তিন হাত দোপাট্টা কাপড়ের ঘোমটার ভিতর থেকে মিহিসুরে বউদিদি বললে, সে কনে খুঁজতে গেছে।
কোন্ চুলোয়।
মজা দিঘির ধারে বাঁশতলায়।
কত দূর হবে।
তিন পহরের পথ
দূর বেশি নয় বটে। কিন্তু, খিদে পেয়েছে। তোমার সেই চাট্নি বের করো দিকি।
বউদিদি নাকি সুরে বললে, হায় রে আমার পোড়া কপাল, এই গেল মঙ্গলবারের আগের মঙ্গলবারে ফাটা ফুটবল্ ভর্তি করে সমস্তটা পাঠিয়ে দিয়েছি বুজুদিদির ওখানে — সে ওটা খেতে ভালোবাসে ছোলার ছাতুর সঙ্গে সর্ষেতেল আর লঙ্কা দিয়ে মেখে।
মুখ শুকিয়ে গেল ; বললুম, আমরা খাই কী।
বউদিদি বললে, শুকনো কুঁচো চিংড়িমাছের মোরব্বা আছে টাট্কা চিটেগুড়ে জমানো। বাছারা খেয়ে নাও, নইলে পিত্তি পড়ে যাবে।
কিছু খেলেম, অনেকটাই রইল বাকি। পুত্তুলালকে জিগেস করলুম, খাবি?
সে বললে, ভাঁড়টা দাও, বাড়ি গিয়ে আহ্নিক করে খাব।
বাড়ি এলেম ফিরে। চটিজুতো ভিজে, গা - ময় কাদা।
বনমালীকে ডাক দিয়ে বললুম, বাঁদর, কী করছিলি।
সে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললে, বিছে কামড়েছিল, তাই ঘুমচ্ছিলুম।
বলেই সে চলে গেল ঘুমতে।
এমন সময় একটা গুণ্ডাগোছের মানুষ একেবারে ঘরের মধ্যে উপস্থিত। মস্ত লম্বা, ঘাড় মোটা, মোটা পিপের মতো গর্দান, বনমালীর মতো রঙ কালো, ঝাঁকড়া চুল, খোঁচা খোঁচা গোঁফ, চোখ দুটো রাঙা, গায়ে ছিটের মের্জাই, কোমরে লাল রঙের ডোরাকাটা লুঙির উপর হলদে রঙের তিন - কোণা গামছা বাঁধা, হাতে পিতলের কাঁকামারা লম্বা একটা বাঁশের লাঠি, গলার আওয়াজ যেন গদাইবাবুদের মোটরগাড়িটার শিঙের মতো। হঠাৎ সে সাড়ে তিন মোন ওজনের গলায় ডেকে উঠল, বাবুমশায়!