সে

‘ তোবা তোবা' বলে তিনবার মন্যুমেণ্টের গায়ে থুথু ফেলে মিঞাসাহেব দৌড়ে গেল স্টেট্‌স‍্ম্যান - আপিসে খবর দিতে।

স্মৃতিরত্নমশায়ের হঠাৎ চৈতন্য হল, মুখটা তাঁর অশুদ্ধ হয়েছে। গেলেন ম্যুজিয়মের দরোয়ানের কাছে। বললেন, পাঁড়েজি, তুমিও ব্রাহ্মণ, আমিও ব্রাহ্মণ — একটা অনুরোধ রাখতে হবে।

পাঁড়েজি দাড়ি চুম্‌‍রিয়ে নিয়ে সেলাম করে বললে, কোমা ভূ পোর্তে ভূ সি ভূ প্লে।

পণ্ডিতমশায় একটু চিন্তা করে বললেন, বড়ো শক্ত প্রশ্ন, সাংখ্যকারিকা মিলিয়ে দেখে কাল জবাব দিয়ে যাব। বিশেষ আজ আমার মুখ অশুদ্ধ, আমি মনুমেণ্ট চেটেছি।

পাঁড়েজি দেশালাই দিয়ে বর্মা চুরুট ধরালো। দু টান টেনে বললে, তা হলে এক্ষুনি খুলুন ওয়েব্‌স্টার ডিক্‌সনারি, দেখুন বিধান কী।

স্মৃতিরত্ন বললেন, তা হলে তো ভাটপাড়ায় যেতে হয়। সে পরে হবে, আপাতত তোমার ঐ পিতলে - বাঁধানো ডাণ্ডাখানা চাই।

পাঁড়ে বললে, কেন, কী করবেন, চোখে কয়লার গুঁড়ো পড়েছে বুঝি?

স্মৃতিরত্ন বললেন, তুমি খবর পেলে কেমন করে। সে তো পড়েছিল পরশু দিন।

ছুটতে হল উল্টোডিঙিতে যকৃত - বিকৃতির বড়ো ডাক্তার ম্যাকার্টনি সাহেবের কাছে। তিনি নারকেলডাঙা থেকে শাবল আনিয়ে সাফ করে দিলেন।

পাঁড়েজি বললে, তবে ডাণ্ডায় তোমার কী প্রয়োজন।

পণ্ডিতমশায় বললেন, দাঁতন করতে হবে।

পাঁড়েজি বললে, ওঃ, তাই বলো, আমি বলি নাকে কাঠি দিয়ে হাঁচবে বুঝি, তা হলে আবার গঙ্গাজল দিয়ে শোধন করতে হত।

এই পর্যন্ত বলে গুড়্‌গুড়িটা কাছে নিয়ে দু টান টেনে সে বললে, দেখো দাদা, এইরকম তোমার বানিয়ে বলবার ধরন। এ যেন আঙুল দিয়ে না লিখে গণেশের শুঁড় দিয়ে লম্বা চালে বাড়িয়ে লেখা। যেটাকে যেরকম জানি সেটাকে অন্যরকম করে দেওয়া। অত্যন্ত সহজ কাজ। যদি বল লাটসাহেব কলুর ব্যাবসা ধরে বাগবাজারে শুটকি মাছের দোকান খুলেছেন, তবে এমন সস্তা ঠাট্টায় যারা হাসে তাদের হাসির দাম কিসের।

চটেছ বলে বোধ হচ্ছে।

কারণ আছে। আমাকে নিয়ে পুপুদিদিকে সেদিন যাচ্ছে - তাই কতকগুলো বাজে কথা বলেছিলে। নিতান্ত ছেলেমানুষ বলেই দিদি হাঁ করে সব শুনেছিল। কিন্তু, অদ্ভুত কথা যদি বলতেই হয় তবে তার মধ্যে কারিগরি চাই তো।

সেটা ছিল না বুঝি?

না, ছিল না। চুপ করে থাকতুম যদি আমাকে সুদ্ধ না জড়াতে। যদি বলতে, তোমার অতিথিকে তুমি জিরাফের মুড়িঘণ্ট খাইয়েছ, সর্ষেবাঁটা দিয়ে তিমিমাছ - ভাজা আর পোলাওয়ের সঙ্গে পাঁকের থেকে টাটকা ধরে আনা জলহস্তী, আর তার সঙ্গে তালের গুঁড়ির ডাঁটা - চচ্চড়ি, তা হলে আমি বলতুম, ওটা হল স্থূল। ওরকম লেখা সহজ।

আচ্ছা, তুমি হলে কী রকম লিখতে।

বলি, রাগ করবে না? দাদা, তোমার চেয়ে আমার কেরামতি যে বেশি তা নয়, কম বলেই সুবিধে। আমি হলে বলতুম —