সে
বলে উঠল, ছি ছি! এ তো রক্তও নয়, পিত্তও নয়, মগজও নয়, মজ্জাও নয় — নিশ্চয় মানুষের পাড়ায় গিয়ে এমন একটা রক্ত খেয়েছে যা নিরামিষ রক্ত, যা অশুচি। পঞ্চায়েত বসে গেল। কামড়বিশারদ - মশায় হুঙ্কার দিয়ে বললে, প্রায়শ্চিত্ত করা চাই। করতেই হল।

যদি না করত।

সর্বনাশ! ও যে পাঁচ - পাঁচটা মেয়ের বাপ ; বড়ো বড়ো খরনখিনীর গৌরীদানের বয়স হয়ে এসেছে। পেটের নীচে লেজ গুটিয়ে সাত গণ্ডা মোষ পণ দিতে চাইলেও বর জুটবে না। এর চেয়েও ভয়ংকর শাস্তি আছে।

কী রকম।

মলে শ্রাদ্ধ করবার জন্যে পুরুত পাওয়া যাবে না, শেষ কালে হয়তো বেত - জঙ্গল গাঁ থেকে নেকড়ে - বেঘো পুরুত আনতে হবে ; সে ভারি লজ্জা, সাত পুরুষের মাথা হেঁট।

শ্রাদ্ধ নাই বা হল।

শোনো একবার। বাঘের ভূত যে না খেয়ে মরবে।

সে তো মরেইছে, আবার মরবে কী করে।

সেই তো আরো বিপদ। না খেয়ে মরা ভালো, কিন্তু ম'রে না খেয়ে বেঁচে থাকা যে বিষম দুর্গ্রহ।

পুপুদিদিকে ভাবিয়ে দিলে। খানিকক্ষণ বাদে ভুরু কুঁচ্‌কিয়ে বললে, ইংরেজের ভূত তা হলে খেতে পায় কী করে।

তারা বেঁচে থাকতে যা খেয়েছে তাতেই তাদের সাত জন্ম অমনি চলে যায়। আমরা যা খাই তাতে বৈতরণী পার হবার অনেক আগেই পেট চোঁ - চোঁ করতে থাকে।

সন্দেহ মীমাংসা হতেই পুপে জিগেস করলে, প্রায়শ্চিত্ত কিরকম হল।

আমি বললুম, হাঁকবিদ্যা - বাচস্পতি বিধান দিলে যে, বাঘাচণ্ডীতলার দক্ষিণপশ্চিম কোণে কৃষ্ণপঞ্চমী তিথি থেকে শুরু করে অমাবস্যার আড়াই পহর রাত পর্যন্ত ওকে কেবল খ্যাঁক্‌শেয়ালির ঘাড়ের মাংস খেয়ে থাকতে হবে ; তাও হয় ওর পিসতুতো বোন কিংবা মাসতুতো শ্যালার মেজো ছেলে ছাড়া আর কেউ শিকার করলে হবে না — আর, ওকে খেতে হবে পিছনের ডান দিকের থাবা দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে। এত বড়ো শাস্তির হুকুম শুনেই গা বমি - বমি করে এল ; চার পায়ে হাত জোড় করে হাউ - হাউ করতে লাগল।

কেন, কী এমন শাস্তি।

বল কী, খ্যাঁক্‌শিয়ালির মাংস! যত দূর অশুচি হতে হয়। বাঘটা দোহাই পেড়ে বললে, আমাকে বরঞ্চ নেউলের লেজ খেতে বলো সেও রাজি, কিন্তু খ্যাঁক্‌শেয়ালির ঘাড়ের মাংস!

শেষকালে কি খেতে হল।

হল বৈকি।

দাদামশায়, বাঘেরা তা হলে খুব ধার্মিক?

ধার্মিক না হলে কি এত নিয়ম বাঁচিয়ে চলে। সেইজন্যেই তো শেয়ালরা ওদের ভারি ভক্তি করে। বাঘের এঁটো প্রসাদ পেলে ওরা বর্তিয়ে যায়। মাঘের ত্রয়োদশীতে যদি মঙ্গলবার পড়ে তা হলে সেদিন ভোর রাত্তিরে ঠিক দেড় প্রহর থাকতে বুড়ো বাঘের পা চেটে আসা শেয়ালদের ভারি পুণ্যকর্ম। কত শেয়াল প্রাণ দিয়েছে এই পুণ্যের জন্যে।

পুপুর বিষম খটকা লাগল। বললে, বাঘরা এতই যদি ধার্মিক হবে তা হলে জীবহত্যে করে কাঁচা মাংস খায় কী করে।