প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
অমরাবতীর যে সুরধুনীনদীর এক পারে ইন্দ্রলোক, তারই ভাঁটিতে আছে আর - এক স্বর্গ। কারখানাঘরের কালো ধোঁয়ার পতাকা উড়ছে সেখানকার আকাশে। সেটা হল কাজের স্বর্গ। সেখানে হাফ্প্যাণ্ট্ - পরা দেবতা বিশ্বকর্মা। একদিন শরৎকালের সকালে পুজোর থালায় শিউলিফুল সাজিয়ে রাস্তায় চলেছি ; ঘাড়ের উপর এসে পড়ল বাইক - চড়া এক পাণ্ডা। তার ঝুলিতে একতাড়া খাতা ; বুকের পকেটে একটা লাল কালির একটা কালো কালীর ফাউণ্টেন্পেন! খবরের কাগজের কাটা টুকরোর বাণ্ডিল চায়না - কোটের দুই পকেট ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছে ; ডান হাতের কব্জিঘড়িতে স্ট্যাণ্ডার্ড টাইম, বাঁ হাতে কলকাতা টাইম ; ব্যাগে ই . আই . আর ., ই . বি . আর ., এ . বি . আর ., এন . ডব্লু . আর ., বি . এন . আর ., বি . বি . আর ., এস . আই . আর .- এর টাইম - টেবিল। বুকের পকেটে নোটবই ডায়রি - সুদ্ধ। ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়িয়ে পড়ি আর - কি। সে বললে, আকাশের দিকে তাকিয়ে চলেছ কোন্ চুলোয়।
আমি বললুম, রাগ করো না, পাণ্ডাজি। মন্দিরে পুজো দিতে যাব, রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি নে।
সে বললে, তোমরা বুঝি মেঘের - দিকে - হাঁ - করে - তাকানো রাস্তা - খোঁজার দল! চলো, পথ দেখিয়ে দিচ্ছি।
আমাকে হিড়্হিড়্ করে টেনে নিয়ে এল বিশ্বকর্মাঠাকুরের মন্দিরে। হাঁ - না করবার সময় দিল না। কিছু জিগেস করবার আগেই বললে, রাখো এইখানে থালা, পকেট থেকে বের করো পাঁচ - সিকে দক্ষিণে।
বোকার মতো পুজো দিলেম। তখনই হিসেব সে টুকে নিলে তার নোটবইয়ে। কব্জিঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললে, হয়েছে কাজ, এখন বেরোও। সময় নেই।
পরদিন থেকেই দেখি ফল ফলেছে। ভোর তখন সাড়ে চারটে। ডাকাত পড়েছে ভেবে ধড়্ফড়্ করে ঘুম ভেঙে শুনি, অনাথতারিণী সভার সভ্যেরা বারো - তেরো বছরের পঁচিশটা ছেলে জুটিয়ে দরজায় এসে চীৎকারস্বরে গান জুড়ে দিয়েছে —
যত পেটে ধরে তার চেয়ে ভর পেটে,
টাকা পয়সায় পকেট পড়ছে ফেটে —
হিসেব খতিয়ে দেখলে বুঝতে পার
অনাথজনের কত ধার তুমি ধার'।
তারো, গরিবেরে তারো,
তারো, তারো, তারো।
‘ তারো তারো' করতে করতে ভীষণ চাঁটি পড়তে লাগল খোলে। মনে মনে যত খতিয়ে দেখছি তহবিলে কত টাকা বাকি, চাঁটি ততই কানে তালা ধরিয়ে দিলে। সঙ্গে সঙ্গে বাজল কাঁসর ; ‘ তারো তারো তারো' করে নাচ জুড়ে দিলে ছেলেগুলো। অসহ্য হয়ে এল। দেরাজ খুলে থলিটা বের করলেম! সাত দিনের না - কামানো দাড়িওয়ালা ওদের সর্দার উৎসাহিত হয়ে চাদর পেতে ধরলে। থলি ঝাড়তে বেরোল এক টাকা, ন আনা, তিন পয়সা। মাসের দু দিন বাকি, দর্জির দেনার জন্যে টানাটানি করে ঐটুকু রেখেছিলেম।
গান ছেড়ে গাল শুরু করলে। বললে, অগাধ টাকা, চিরটা দিন পায়ের উপর পা দিয়ে গদিয়ান হয়ে বসে আছ ; ভুলেছ, যেদিন মরবে সেদিন তোমার মতো লক্ষপতির যে দর আর আমাদের ছেঁড়া - ট্যানা - পরা ভিখিরিরও সেই দর।
এ কথাগুলো পুরোনো ঠেকল, কিন্তু ঐ লক্ষপতি বিশেষণটাতে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল।
এই হল শুরু। তার পরে ইতিমধ্যে পঁচিশটা সভার সভ্য হয়েছি। বাংলাদেশে সরকারি সভাপতি হয়ে দাঁড়ালেম। আদি ভারতীয় - সংগীত সভা, কচুরিপানা - ধ্বংসন সভা, মৃতসৎকার সভা, সাহিত্যশোধন সভা, তিন চণ্ডীদাসের সমন্বয় সভা, ইক্ষুছিবড়ের