প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
পুপেদিদি এতখানি চোখ করে বললে, সত্যি কি, দাদামশায়।
আমি বললুম, সত্যির চেয়ে অনেক বেশি— গল্প।
আমি তখন এম . এ . ক্লাসের জন্যে এরিয়োপ্যাজিটিকার নোট লিখছি, মিলিয়ে দেখবার জন্যে বই পড়তে হচ্ছিল ইন্টরন্যাশনল মেলিফ্লুয়স্ অ্যাব্রা - ক্যাড্যাব্রা, আর পাত কেটে পরিশিষ্ট দেখছিলুম থ্রী হণ্ড্রেড ইয়র্স্ অব ইণ্ডো - ইণ্ডিটর্মিনেশন্ বইখানার।
লাইব্রেরি থেকে আনাতে দিয়েছি অনোম্যাটোপিইয়া অফ টিণ্টিন্যাব্যুলেশন্। এমন সময় হুড়্মুড়্ করে এসে ঢুকল আমাদের সে।
আমি বললুম, হয়েছে কী, স্ত্রী গলায় দড়ি দিয়েছে নাকি।
ও বললে নিশ্চয় দিত যদি সে থাকত। কিন্তু, কী কাণ্ড বাধিয়েছে বলো দেখি।
কেন, কী হল।
আমাকে নিয়ে এ পর্যন্ত আজগবি গল্প বানিয়েছ। ভাগ্যে আমার নামটা দাও নি, নইলে ভদ্রসমাজে মুখ দেখানো দায় হত। দেখলুম পুপুদিদির মজা লাগছে, তাই সহ্য করেছি সব। কিন্তু এবার যে উল্টো হল।
কেন, কী হল বলোই - না।
তবে শোনো। পুপুদিদি কাল গিয়েছিল সিনেমায়। মোটরে উঠতে যাচ্ছে, আমি পিছন থেকে এসে বললুম, দিদিমণি, তোমার গাড়িতে আমাকে তুলে নিয়ে যাও। তার পরে কী আর বলব দাদা, একেবারে হিস্টিরিয়া।
কিরকম।
হাতে চোখ ঢেকে চেঁচিয়ে উঠে দিদি বললে, যাও যাও, গাঁজাখোরের গা চুরি করে আমার গাড়িতে উঠতে পাবে না। চার দিক থেকে লোক এল ছুটে, আমাকে পুলিসে ধরে নিয়ে যায় আর - কি। জীবনে অনেক নিন্দে শুনেছি, কিন্তু এরকম ওরিজিন্যাল নিন্দে শুনি নি কখনো। গাঁজাখোরের গা চুরি করা! আমার অতিবড়ো প্রাণের বন্ধুও এমন নিন্দে আমার নামে রটায় নি। বাড়ি ফিরে এসে সমস্ত ব্যাপারটা শোনা গেল। এ তোমারই কীর্তি।
আমারই তো বটে। কী করি বলো। তোমাকে নিয়ে আর কাঁহাতক গল্প বানাই। বয়স হয়ে গেছে, কলমটাকে যেন বাতে ধরল, পুপুদিদির ফরমাশ - মতো অসম্ভব গল্প বলার হালকা চাল আর নেই কলমের। তাই এই শেষ গল্পটাতে তোমাকে একেবারে খতম করে দিয়েছি।
খতম হতে রাজি নই, দাদা। দোহাই তোমার, পুপুদিদির ভয় ভাঙিয়ে দাও। বুঝিয়ে বলো, ওটা গল্প।
বলেছিলুম, কিন্তু ভয় ভাঙতে চায় না। নাড়ীতে জড়িয়ে গেছে। উপায় না দেখে স্বয়ং সেই পাতু গেঁজেলকে আনলুম তার সামনে, উল্টো হল ফল। পাতুর গা'খানা প'রে যে তুমিই ঘুরে বেড়াচ্ছ তারই প্রমাণ প্রত্যক্ষ হয়ে গেল।
তা হলে দাদা, গল্পটাকে উল্টিয়ে দাও, ধনুষ্টঙ্কারে মরুক পাতু। গাঁজাখোরের গা'খানাকে নিমতলার ঘাটে পুড়িয়ে ফেলো। ঘটা করে তার শ্রাদ্ধ করব, পুপুদিদিকে করব তাতে নেমন্তন্ন ; খরচ যত পড়ে দেব নিজের পকেট থেকে। আমি হলুম দিদির গল্পের বহুরূপী, হঠাৎ এত বড়ো পদ থেকে আমাকে অপদস্থ করলে বাঁচব না।
আচ্ছা, গল্পের উল্টোরথে তোমাকে পুপুদিদির ঘরে আবার ফিরিয়ে আনব।