সে

পরদিন সন্ধ্যার সময় সে এল, আমি শুরু করলুম গল্পটা। —

বললুম, পাতুর স্ত্রী স্বামীর স্বত্ব পাবার জন্যে তোমার নামে আদালতে নালিশ করেছে।

এইটুকু শুনেই সে বলে উঠল, এ চলবে না, দাদা। পাতুর স্ত্রীকে তুমি চক্ষে দেখ নি তো। মকদ্দমায় ঐ মহিলাটি যদি জেতে তা হলে যে আসামীপক্ষ আফিম খেয়ে মরবে।

ভয় কী, কথা দিচ্ছি, হার হোক, জিত হোক, টিঁকিয়ে রাখব তোমাকে।

আচ্ছা, বলে যাও।

 

হাত জোড় করে তুমি হাকিমকে বললে, হজুর, ধর্মাবতার, সাত পুরুষে আমি ওর স্বামী নই।

উকিল চোখ রাঙিয়ে বললে, স্বামী নও, তার মানে কী।

তুমি বললে, তার মানে, এ পর্যন্ত আমি ওকে বিয়ে করি নি, দ্বিতীয় আর কোনো মানে আপাতত কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি নে।

রামসদয় মোক্তার খুব একটা ধমক দিয়ে বললে, আলবৎ তুমি ওর স্বামী, মিথ্যে কথা বোলো না।

তুমি জজসাহেবের দিকে তাকিয়ে বললে, জীবনে বিস্তর মিথ্যে বলেছি, কিন্তু ঐ বুড়িকে সজ্ঞানে স্ব-ইচ্ছায় বিয়ে করেছি, এত বড়ো দিগ‍্গজ মিথ্যে বানিয়ে বলবার তাকত আমার নেই।

মনে করতে বুক কেঁপে ওঠে।

তখন ওরা সাক্ষী তলব করলে পঁয়ত্রিশজন গাঁজাখোরকে। একে একে তারা গাঁজাটেপা আঙুল তোমার মুখে বুলিয়ে বলে গেল, চেহারাটা একেবারে হুবহু পাতুর; এমন-কি, বাঁ কপালের আবটা পর্যন্ত। তবে কি না—

মোক্তার তেরিয়া হয়ে উঠে বললে, ‘তবে কি না’ আবার কিসের।

ওরা বললে, সেই রকমের পাতুই বটে, কিন্তু সেই পাতুই, হলপ করে এমন কথা বলি কী করে। ঠাক্‌রুনকে তো জানি, বন্ধু কম দুঃখ পায় নি, অনেক ঝাঁটা ক্ষয়ে গেছে ওর পিঠে। তার দাম বাঁচালে গাঁজার খরচে টানাটানি পড়ত না। তাই বলছি হজুর, আদালতে হলপ করে ভদ্রলোকের সর্বনাশ করতে পারব না।

মোক্তার চোখ রাঙিয়ে বললে, তা হলে এ লোকটা কে বলো। দ্বিতীয় পাতু বানাবার শক্তি ভগবানেরও নেই।

গেঁজেলের সর্দার বললে, ঠিক বলেছ বাবা, এরকম ছিষ্টি দৈবাৎ হয়। ভগবান নাকে খত দিয়েছেন, এমন কাজ আর করবেন না। তবু তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, একটা কোনো শয়তান ভগবানের পাল্টা জবাব দিয়েছে। একেবারে ওস্তাদের হাতের নকল, পাকা জালিয়াতের কাজ। পাতুর দেহখানা শুকিয়ে শুকিয়ে ওর নাক চিম্‌‍সিয়ে বেঁকে গিয়েছিল, সেই বঙ্কিমচন্দুরে নাকটি পর্যন্ত যেন কেটে ওর মুখের মাঝখানে বসিয়ে দিয়েছে। ওর হাতের চামড়া নকল করতে বোধ করি হাজার চামচিকের ডানা খরচ করতে হয়েছে।

তুমি দেখলে মকদ্দমা আর টেঁকে না; সাহেবকে বললে, এক হপ্তা সময় দিন, খাঁটি পাতু পক্ষীরাজকে হাজির করে দেব এই আদালতে।

তখনই ছুটলে তেলিনিপাড়ার দিঘির ঘাটে। কপাল ভালো, ঠিক তক্ষুনি তোমার দেহটা উঠছে ভেসে। পাতুর দেহ ডাঙায় চিত করে ফেলে পুরোনো খোলটা জুড়ে বসলে! মস্ত একটা হাঁপ ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ডাক দিলে, ওরে পাতু!

তখনই ওর দেহটা উঠল খাড়া হয়ে। পাতু বললে, ভায়া, সঙ্গে সঙ্গেই ছিলুম। মনটা অস্থির ছিল গাঁজার মৌতাতে। ইচ্ছে