প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
“ আমি একবার দেখে আসি-না। ”
“ না, শোনো, একটা প্রশ্ন আছে। সাহিত্য-সম্রাট, গল্পটার মজ্জা যেখানে সেখানে পৌঁচেছে তোমার দৃষ্টি? ”
“ আমার হয়েছে অন্ধগোলাঙ্গুলন্যায়। লেজটা ধরেছি চেপে বাকিটা টান মেরেছে আমাকে, সমস্ত চেহারাটা পাচ্ছি নে। মোট কথাটা বুঝছি সুষমা বিয়ে করবে রাজাবাহাদুরকে, পাবে ঐশ্বর্য, তার বদলে হাতটা দিতে প্রস্তুত হৃদয়টা নয়। ”
“ শোনো, বলি, সোমশংকর নয় প্রধান নায়ক এ কথা মনে রেখো। ”
“ তাই না কি। তা হলে অন্তত গল্পের ঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দাও, তার পরে সাঁতরে হোক খেয়া ধরে হোক পারে পৌঁছব। ”
“ এ খবরটা বোধ হয় আগে থাকতেই জান, যে, মুক্তারাম তরুণসমাজে বিনামাইনের মাস্টারি করে থাকেন, বাছাই করে নেন ছাত্র। ছাত্রী পেতে পারতেন অসংখ্য — কিন্তু তাদের সম্বন্ধে বাছাই করার রীতি এত কড়া যে এতদিনে একটিমাত্র পেয়েছেন, তারই নাম সুষমা সেন। ”
“ যাদের ত্যাগ করেছেন তাদের কী দশা! ”
“ তাদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা কত, খবর পাই নি। কিন্তু এ জানি, তাদের আনেকেই চক্ষু মেলে চাঁদের পানে তাকিয়ে থাকে। ”
“ সেই চকোরীর দলে তুমি নাম লেখাও নি বাঁশি?”
“ তোমার কী মনে হয়? ”
“ আমার মনে হয় চকোরী নও, তুমি মিসেস রাহুর পদ পাবার উমেদার। তুমি যাকে নেবে তাকে আগাগোড়া দেবে আত্মসাৎ করে, চক্ষু মেলে চেয়ে থাকা নয়। ”
“ ধন্য! ‘ সাধু ', চরিত্রচিত্রে তুমি হবে বাংলাদেশে প্রথমশ্রেণীর প্রথম। গোল্ডমেডালিস্ট। লোকমুখে শোনা যায় মেয়েদের স্বভাবের রহস্য ভেদ করতে হার মানেন মেয়েদের সৃষ্টিকর্তা পর্যন্ত — তোমার দৃষ্টি দেখছি কোনো বাধা মানে না। ”
হাতজোর করে পৃথ্বীশ — বললে, “ বন্দনা সারা হল, এবার পালা শুরু করো। ”
“ এটা কি এখনো আন্দাজ করতে পার নি যে, সুষমা ওই মুক্তারাম সন্ন্যাসীর ভালোবাসায় একেবারে শেষ পর্যন্ত তলিয়ে গিয়েছে। ”
“ ভালোবাসা না ভক্তি? ”
“ চরিত্রবিশারদ, এখনো জান না, মেয়েদের যে ভালোবাসা ভক্তিতে পৌঁছয় সেটা তাদের মহাপ্রয়াণ। তার থেকে ফেরবার রাস্তা নেই। মেয়েদের মায়ায় অভিভূত হয়ে সমানক্ষেত্রে যারা ধরা দিয়েছে তারা কেনে ইন্টারমিডিয়েটের টিকিট, কেউ-বা থার্ডক্লাসের। মেয়েদের কাছে হার মানল না যে, ওদের ভুজপাশের দিগ্বলয় এড়িয়ে যে উঠল মধ্য গগনে, দুই জোড়হাত উপরে তুলে তাকেই দিলে মেয়েরা আপন শ্রেষ্ঠদান। দেখ নি কী সন্ন্যাসী যেখানে সেখানে মেয়েদের কী ভিড়। ”
“ আচ্ছা, মানছি তা, কিন্তু উল্টোটাও দেখেছি। মেয়েদের বিষম টান বর্বরের দিকে, তাদের কঠোরতম অপমানে ওরা পুলকিত হয়ে ওঠে, পিছন পিছন রসাতল পর্যন্ত যেতে হয় রাজি। ”
“ তার কারণ মেয়েরা অভিসারিকার জাত, এগিয়ে গিয়ে যাকে চাইতে হয় তার দিকেই ওদের ভালোবাসা। উপেক্ষা তারই 'পরে দুর্বৃত্ত হবার মতো জোর নেই যার কিংবা দুর্লভ হবার মতো তপস্যা। ”
“ বুঝলুম, ওই সন্ন্যাসীকে ভালোবেসেছে সুষমা। ”