প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
“ আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, এ অবস্থায় তুমি হলে কী করতে। ”
“ আমি হলে পরম ভক্তিভরে সন্ন্যাসীর কথা সোনার জলে মরক্কো চামড়ার বাঁধা খাতায় লিখে রাখতুম, তার পরে দুর্দম আসক্তির জোর কলমে তার প্রত্যেক অক্ষরের উপর দিতাম কালির আঁচড় কেটে। ওই তাপস চায় প্রকৃতির মতোই মুগ্ধ করতে, নিজের মন্ত্র দিয়ে অন্যের মন্ত্রটা খন্ডন করবার জন্যে। আমার উপর খাটত না এ মন্ত্র, যদি একটু সম্ভব হত তা হলে সন্ন্যাসী নিশ্চয়ই আমাকে ছেড়ে সুষমার দিকে তাকাত না, এ কথা আমি জোর করেই বলতে পারি। ”
“ বেশ কথা, কিন্তু ইতিহাসের গোড়ার দিকে অনেকটা ফাঁক পড়েছে, সেটা ভরিয়ে নিতে হবে। ওদের বিবাহসম্বন্ধ সন্ন্যাসী ঘটালো কী উপায়ে?”
“ প্রথমত সেনবংশ যে ক্ষত্রিয়, তারা যে কোনো-এক খৃস্টশতাব্দীতে দক্ষিণ থেকে এসেছিল দিগ্বিজয় বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশে, সেইটে প্রমাণ করে হিন্দি অনুবাদসহ সংস্কৃততে লিখলে এক পুঁথি। কাশীর কোনো কোনো দ্রাবিড়ী পন্ডিতের সমর্থন জুড়ে দিলে তার সঙ্গে। সন্ন্যাসী স্বয়ং সোমশংকরের রাজ্যে গেল — প্রজারা চেহারা দেখেই তেত্রিশ কোটির মধ্যে কোন্-এক দেবতার অংশাবতার বলে নিলে ওকে মাথায় করে। সভাপন্ডিত শুদ্ধ মুগ্ধ হল আলাপে। কুমায়ুনের কোন্ পাহাড়ে এদের দুজনের ঘটালে সাক্ষাৎ। ওরা দোঁহে মিলে ঘোড়ায় চড়ে ফিরল দুর্গমে, শিকারে বেরোল বনে জঙ্গলে। বীরপুরুষের মন ভুলল অনেকখানি প্রকৃতির মোহে, অনেকখানি সন্ন্যাসীর মন্ত্রে, তার পর এই যা দেখছ। ”
“ ইচ্ছা করছে তরুণ তাপস সংঘে আমিও যোগ দিই। ”
“ কেন, সংসারতাপ নিবারণের জন্যে, না পেটের জ্বালা? ”
“ সন্ন্যাসীর Love's philosophy যা শুনলুম শেলির সঙ্গে তা মেলে না কিন্তু মনের শান্তি পাবার জন্যে নিজের পক্ষে আশু তার প্রয়োজন। ”
“ যেয়ো সংঘে, কেউ আপত্তি করবে না। কিন্তু তার আগে এমন একটা গল্প লিখে যাও যাকে নাম দিতে পারবে মোহমুদ্গর। ”
“ শংকরের মোহমুদ্গর? ”
“ হাঁ তাই। সত্য কথা লিখতে শেখো। ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে নয়, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে। ”
বাঁশরির মুখ লাল হয়ে উঠেছে, দৃষ্টিতে জ্বলছে যেন ইস্পাতের ঝল্সানি। পৃথ্বীশ মনে মনে ভাবছে — কী সুন্দর দেখাচ্ছে একে।
বাঁশরি একসময়ে চৌকি থেকে উঠে বললে, “ বলবার কথা শেষ হল। এখন মফিজকে বলে আসি তোমার জন্যে কিছু খাবার নিয়ে আসুক। ”
পৃথ্বীশ ছুটে এসে ওর হাত চেপে ধরলে, বললে, “ খাবার চাই নে, তুমি যেয়ো না। ”
বাঁশরি হাত ছুটিয়ে নিয়ে হো হো করে হেসে উঠল। বললে, “ আমাকে হঠাৎ তোমার ‘ বেমানান ' গল্পের নায়িকা বানিয়ে তুলো না, তোমার জানা উচিত ছিল আমি ভয়ংকর সত্যি। ”
ঠিক সেই সময়ে ড্রেসিং গাউন পরে ওর ভাই সতীশ ঢুকে পড়ল ঘরে। জিজ্ঞাসা করলে, “ উচ্চ হাসির আওয়াজ শুনলাম যে। ”