শেষরক্ষা

কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে,

   কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে।

উঁ হুঁ, ও হচ্ছে না। ‘ কেমন করে ' কথাটাকে তো কমাবার জো নেই। ‘ কেমন করিয়া ' — তাতে আরো একটা অক্ষর বেড়ে যায়। ‘ তখনি চিনিলে 'র জায়গায় ‘ তৎক্ষনাৎ চিনিলে' বসিয়ে দিতে পারি, কিন্তু সুবিধে হয় না। দূর হোক গে! ছন্দে লেখাটা বর্বরতা। যে সময় পুরুষমানুষ কানে কুন্ডল, হাতে অঙ্গদ পরত, পদ্য জিনিসটা সেই যুগের ; ডিমক্রাটিক যুগের জন্যে গদ্য। হওয়া উচিত ছিল — ‘ বলি ও কাদম্বিনী, যেমনি আমার উপর নজর পড়ল অমনি আমাকে গোলাম বলে চিনে নিলে কেমন করে খুলে বলো তো '। এর মধ্যে বিক্রমাদিত্যের নবরত্নসভার সীলমোহরের ছাপ নেই — একেবারে খাস শ্রীযুক্ত গদাইচন্দ্রের গোমুখী-বিনির্গত।

শিবচরণের প্রবেশ

শিবচরণ। কী হচ্ছে গদাই?

গদাই। আজ্ঞে, ফিজিয়লজির নোটগুলো একবার দেখে নিচ্ছি।

শিবচরণ। ফিজিয়লজির কোন্‌ জায়গাটাতে আছ?

গদাই। হার্টের ফাংশন নিয়ে।

শিবচরণ। দেখি তোমার নোটবইটা। আমি তোমাকে হয়তো কিছু —

গদাই। আজ্ঞে, এ একেবারে লেটেস্‌ট্‌ থিওরি নিয়ে — বোধ হয় মাসখানেক হল এর ডিস্‌কভারি হয়েছে। এখনো সকলে জানে না।

শিবচরণ। সত্যি নাকি? আমি আবার চশমাটা আনি নি। সব্‌জেক্‌টটা ইন্টারেস্‌টিং, পরে শুনে নেব তোর কাছ থেকে। কিন্তু, এখানে করছিস কী?

গদাই। এক্‌জামিনটা খুব কাছে এসেছে — চন্দ্রবাবুর বাসাটা নিরিবিলি আছে, তাই এখানে —

শিবচরণ। দেখো বাপু, একটা কথা আছে। তোমার বয়স হয়েছে, তাই আমি তোমার জন্যে একটি কন্যা ঠিক করেছি।

গদাই। ( স্বগত) কী সর্বনাশ!

শিবচরণ। নিবারণবাবুকে জানো বোধ করি —

গদাই। আজ্ঞে হাঁ, জানি।

শিবচরণ। তাঁরই কন্যা ইন্দুমতী। মেয়েটি দেখতে শুনতে ভালো, বয়সেও তোমার যোগ্য। দিনও একরকম স্থির।

গদাই। একেবারে স্থির করেছেন? কিন্তু এখন তো হতে পারে না।

শিবচরণ। কেন বাপু?

গদাই। এক্‌জামিন কাছে এসেছে —

শিবচরণ। তা হোক্‌‍-না এক্‌জামিন। বউমাকে বাপের বাড়ি রেখে দেব, এক্‌জামিন হয়ে গেলে ঘরে আনা যাবে।

গদাই। ডাক্তারিটা পাস না করেই কি —

শিবচরণ। কেন বাপু, তোমার সঙ্গে তো একটা শক্ত ব্যায়রামের বিয়ে দিচ্ছি নে। মানুষ ডাক্তারি না জেনেও বিয়ে করে। কিন্তু, আপত্তিটা কিসের জন্যে?

গদাই। উপার্জনক্ষম না হয়ে বিয়ে করাটা —