শেষরক্ষা

শিবচরণ। উপার্জন? আমি কি তোমাকে আমার বিষয় থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছি? তুমি কি সাহেব হয়েছ যে, বিয়ে করেই স্বাধীন ঘরকন্না করতে যাবে?

গদাই নিরুত্তর

তোমার হল কী! বিয়ে করবে, তার আবার এত ভাবনা কী! আমি কি তোমার ফাঁসির হুকুম দিলুম!

গদাই। বাবা, আপনার পায়ে পড়ি, আমাকে এখন বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন না।

শিবচরণ। ( সরোষে) অনুরোধ কী বেটা! হুকুম করব। আমি বলছি, তোকে বিয়ে করতেই হবে।

গদাই। আমাকে মাপ করুন, আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করতে পারব না।

শিবচরণ। ( উচ্চস্বরে) কেন পারবি নে! তোর বাপ পিতামহ, তোর চৌদ্দপুরুষ বরাবর বিয়ে করে এসেছে, আর তুই বেটা দু পাতা ইংরিজি উলটে আর বিয়ে করতে পারবি নে!

গদাই। আমি মিনতি করে বলছি বাবা, একেবারে মর্মান্তিক অনিচ্ছে না থাকলে আমি কখনোই এ প্রস্তাবে —

শিবচরণ। তুমি বেটা আমার বংশে জন্মগ্রহণ করে হঠাৎ একদিনে এত বড়ো বৈরাগী হয়ে উঠলে কোথা থেকে। এমন সৃষ্টিছাড়া অনিচ্ছেটা হল কেন, সেটা তো শোনা আবশ্যক।

গদাই। আচ্ছা, আমি মাসিমাকে সব কথা বলব, আপনি তাঁর কাছে জানতে পারবেন।

শিবচরণ। আচ্ছা।

[ প্রস্থান

গদাই। আমার ছন্দ মিল ভাব সমস্ত ঘুলিয়ে গেল ; এখন যে আর এক লাইনও মাথায় আসবে এমন সম্ভাবনা দেখি নে।

 

চন্দ্রের প্রবেশ

 

চন্দ্রকান্ত। আজ বিনোদের বিয়ে, মনে আছে তো গদাই?

গদাই। তাই তো, ভুলে গিয়েছিলুম বটে।

চন্দ্রকান্ত। তোমার স্মরণশক্তির যেরকম অবস্থা দেখছি, এক্‌জামিনের পক্ষে সুবিধে নয়। এইখানে বৈঠক হবে, চলো ওদের ধরে নিয়ে আসিগে।

গদাই। আজ শরীরটা তেমন ভালো ঠেকছে না, আজ থাক্‌ —

চন্দ্রকান্ত। বিনোদের বিয়েটা তো বছরের মধ্যে সদাসর্বদা হবে না গদাই! যা হবার আজই চুকে যাবে। অতএব আজ তোমাকে ছাড়ছি নে, চলো।

গদাই। চলো।

[ প্রস্থান

ক্ষান্তমণি ও ইন্দুর প্রবেশ

ইন্দু। বর তো তোমাদের এখান থেকেই বেরোবেন? তাঁর তিন কূলে আর কেউ নেই নাকি?

ক্ষান্তমণি। বাপ-মা নেই বটে, কিন্তু শুনেছি দেশে পিসি-মাসি সব আছে — তাদের খবরও দেয় নি। বলে যে, বিয়ে করছি